ওমিক্রন আতঙ্কে বড়দিনের ছুটি উপলক্ষে প্রিয়জনের সাথে মিলিত হবার কর্মসূচি লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়লো। ইউনাইটেড, ডেল্টা, আমেরিকান এয়ারলাইন্স, আলাস্কাসহ বেশ কটি এয়ারলাইন্সের শতশত ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয়া হলো বৃহস্পতিবার। আরো কয়েকটি এয়ারলাইন্স পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
নিউইয়র্কের বিশ্বখ্যাত টাইমস স্কোয়ারে ইংরেজী নতুন বছরের শুভক্ষণটি প্রাণের উচ্ছ্বাস আর হৃদয়ের উষ্ণতায় বরণের কর্মসূচিকেও একেবারেই সীমিত করার নয়া ঘোষণা দেয়া হলো। ১ জানুয়ারি নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের শপথ গ্রহণের বড় আয়োজনটি বাতিল করা হয়েছে। এভাবেই করোনা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পরিকল্পনায় ব্যাঘাত হয়ে দেখা দিলো ওমিক্রন।
উল্লেখ্য, এফডিএ ফাইজারের প্যাক্সলোভিড এবং মার্কের ‘মোলনুপিরাভির’ বড়ির অনুমোদন দিয়েছে বুধ ও বৃহস্পতিবার। করোনার চিকিৎসায় এই প্রথম মুখে খাওয়ার বড়ি বাজারের আসার অনুমতি পাওয়ায় আমেরিকানদের মধ্যে যতটা স্বস্তি আসার কথা, তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না ওমিক্রণের তাণ্ডবে। অধিকন্তু প্রতিদিনই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কড়া নির্দেশনা আসছে ফেডারেল, স্টেট এবং সিটি প্রশাসন থেকে।
বড়দিন এবং ইংরেজী নতুন বছর উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হয়েছে এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে খোলার কথা। কিন্তু ওমিক্রনের আতংক চলতে থাকলে স্কুলের ক্লাস পুনরায় ভার্চুয়ালে করার নির্দেশনা এলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বুধবার প্রদত্ত ভাষণে উল্লেখ করেছেন যে, লকডাউনে আর যাবো না। টিকার মাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। খাবার ওষুধও আসছে। তাই সকলেই বুস্টার ডোজ নিলে কিংবা আক্রান্তরা বড়ি সেবন করলে মহামারির আশংকা আর থাকবে না।
ওমিক্রনের সংক্রমিত হবার ঘটনা অবিশ্বাস্য রকমভাবে বাড়তে থাকায় করোনা টেস্টেও সামগ্রির সংকট দেখা দিয়েছে। এটিও আতংকিত হবার অন্যতম একটি কারণ বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এজন্যে ৫০০ মিলিয়ন কিটসের অর্ডার দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বড়ির অর্ডারও দেয়া হয়েছে কয়েকশত মিলিয়নের।
এয়ারলাইন্স সমূহের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে যে, তাদের বেশ কিছু ক্রু সংক্রমিত হয়েছেন। অনেকে স্বেচ্ছায় আইসোলেশনে গেছেন। করোনার টেস্টের লাইনে দাঁড়াচ্ছেন কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকে তা পাচ্ছেন না কিটসের সংকটে। এরফলে ফ্লাইট কাটছাট করতে হয়েছে। ডিসেম্বর মাসটি এয়ারলাইন্স ব্যবসার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। করোনার তাণ্ডবে গত বছরও প্যাসেঞ্জার পাওয়া যায়নি। এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কিন্তু ওমিক্রনের তাণ্ডবে বুক করা টিকিটও বাতিল অথবা স্থগিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ বিরাট অংকের ক্ষতির সম্মূখীন হবে এয়ারলাইন্সগুলো-যা কোনভাবেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না-উল্লেখ করা হয়েছে এয়ালাইন্সের যুক্ত বিবৃতিতে। বিশ্বে সর্ববৃহৎ এয়ারলাইন্সের অন্যতম আমেরিকান, ইউনাইটেড, ডেল্টা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ২০ কোটি প্যাসেঞ্জার বহন করেছে। এবার আগাম টিকিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪ লাখ ২০ হাজার। দ্য ট্র্যান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি এডমিনিস্ট্রেশন (টিএসএ)’র প্রশাসক ডেভিড পিকোস্কি বৃহস্পতিবার বলেছেন, ডিসেম্বরের ১৬ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত ৫ দিনের প্রতিদিন গড়ে ২০ লাখের মত প্যাসেঞ্জার বহন করা হয়। এটি ছিল গত বছরের দ্বিগুণ। কিন্তু ওমিক্রণে প্যাসেঞ্জারের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। এমনি অবস্থায় ফ্লাইট ক্রুরা আক্রান্ত হওয়ায় এয়ারলাইন্সগুলো সচল হতে পারছে না।
এদিকে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে করোনার ভীতি কাটাতে একেকজনকে সপ্তাহে অন্তত: দু’বার টেস্ট করা দরকার। তাহলে ৩৩০ মিলিয়ন আমেরিকানের জন্যে প্রতি মাসে আড়াই বিলিয়ন টেস্ট কিট দরকার। অথচ প্রেসিডেন্ট বাইডেন অর্ডার দিয়েছেন মাত্র ৫০০ মিলিয়নের। তাই, সবকিছু বাস্তবতার আলোকে করা দরকার বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন