শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও সিডনিতে ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল ভাষা সংগ্রামীদের স্মরণ করে নানা আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে গতকাল রবিবার ‘একুশের প্রাণ মুক্তির গান’ শীর্ষক অমর একুশের (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস) অনলাইন আয়োজনটি স্কুলের ইউটিউব চ্যানেল থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠানের সূচনাতেই বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এরপরই বিগত কয়েক বছরের ধারণকৃত প্রভাতফেরির একটি সংকলন দেখানো হয়। প্রথমেই বাংলা স্কুল সাধারণ সম্পাদক কাজী আশফাক রহমান দেশ বিদেশের সব বাংলা ভাষাভাষীদের অমর একুশের এবারের আয়োজনে স্বাগত জানান। এরপরই স্থানীয় সংসদ সদস্য আনুলাক চানটিভং এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কনসাল জেনারেল খন্দকার মাসুদুল আলমের পাঠানো বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।
নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের পরপরই এবারের একুশে সম্মাননা ২০২২ তুলে দেয়া হয় এই প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রসারে অসামান্য অবদান রাখা ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য আবদুল জলিলের হাতে। সম্মাননা তুলে দেন ক্যাম্বেলটাউন বাংলা স্কুলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য নাজমুল আহসান খান, শাহ আলম সৈয়দ এবং বাংলা স্কুল সভাপতি মসিউল আজম খান স্বপন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা সবাইকে মুগ্ধ করে। একক সংগীত পরিবেশন করে জেইনা, জাহিয়া, অর্ণা, রাসমিয়া, নুরিন ও নারমিন। কবিতা আবৃত্তি করে অস্কার, অলিভিয়া, মাহরুস, অর্ণিলা, রাইনা, রাইসা, ইয়াশফীন, মারজান, রাকিন, সোহারদিতি, সম্প্রীতি, আনিকা, এলভিরা, দৃপ্ত ও আলিশা। ভাষা দিবসকে উপজীব্য করে একটি নাটিকা পরিবেশন করে স্বপ্নীল ও স্বাধীন। ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনা চলাকালীন তাদের অংকিত একুশের চিত্রাঙ্কন পর্দায় ভেসে উঠলে অনুষ্ঠানে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়। এই পর্বের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন শ্রেণী শিক্ষক অনিতা মন্ডল ও বিশাখা পাল।
তৃতীয় ও শেষ পর্বে পরিবেশনা নিয়ে আসেন সিডনির প্রখ্যাত শিল্পীবৃন্দ। কবিতা পাঠ করেন বাচিক শিল্পী মৌমিতা চৌধুরী। সংগীত পরিবেশন করেন তাহমিনা খান পিউ, রুমানা ফেরদৌস লনি, লুৎফা খালেদ, পিয়া, নাজমুল আহসান খান। বেহালায় একুশের গানের অন্তর ছোঁয়া সুর তুলে আনেন বাংলা স্কুলের শিক্ষক আবীর হারুনি।
দোতারা ও বঙ্গের হৃদয় কারা তালে দেশজ গানের পরিবেশনা নিয়ে আসেন আহমেদ তারিক ও বিজয় সাহা। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা দেশ বরেণ্য সংগীতজ্ঞ সিরাজুস সালেকিন একুশ নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা, আবেগের কথা, পারিবারিক সম্পৃক্ততার কথা গানের পাশাপাশি তাঁর পরিবেশনায় তুলে আনেন।
সবশেষে বাংলা স্কুল সভাপতি মসিউল আজম খান স্বপন সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং এবছর স্কুলের বিশ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। ‘একুশের প্রাণ মুক্তির গান’ শীর্ষক অমর একুশে অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ফায়সাল খালিদ শুভ’র পরিচালনায় ও রাফায়েল রোজারিও এর কারিগরি নিয়ন্ত্রণ ও সম্পাদনায় সাজানো অনুষ্ঠানটি দুপুর একটায় শেষ হয়।
পুরো অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন স্কুলের সংগীত শিক্ষক রুমানা ফেরদৌস লনি। রুমানা খান মোনার সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবারে আয়োজনের অনুষ্ঠান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন মেহেদী হাসান। প্রচারে ছিলেন ইয়াকুব আলী। সহায়তায় ছিলেন নুরুল ইসলাম শাহিন, আনজুমান আরা আইরিন ও সাজ্জাদ সিদ্দিকী।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর