আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিউইয়র্কে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের একটি প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটলো জ্যামাইকায় একটি সড়কের নামকরণ ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ হওয়ায়। ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার অপরাহ্নে শত শত প্রবাসীর জয়-বাংলা স্লোগান আর বিপুল করতালির মধ্যে হিলসাইড এভিনিউ এবং হোমলোন স্ট্রিটের কর্ণারে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র নামফলক উন্মোচন করেন সিটি কাউন্সিলম্যান জেমস এফ জিনারো। এখান থেকে হিলসাইড এভিনিউ ধরে অন্তত দুই ব্লক এই নামে পরিচিত হবে।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে তিন লাখের বেশি বাংলাদেশি বাস করেন। এর ২৫% হচ্ছেন জ্যামাইকার জিহলসাইডে। এজন্যেই সিটি কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে এই বিলটি পাশ হয়।
ব্যস্ততম হিলসাইড এভিনিউর এই অংশটুকুর পুনর্নামকরণের ফলক উম্মোচনের দিনটিকে ২১ ফেব্রুয়ারিতে বেছে নেয়া প্রসঙ্গে কাউন্সিলম্যান জেমস জিনারো বলেন, বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাঙালি তরুণেরা জীবন দিয়েছেন। সেই আন্দোলনের পথ বেয়ে একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এ পরিণত করেছে জাতিসংঘ। এমন একটি ঐতিহাসিক-স্মরণীয় দিনে ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’র উদ্বোধন হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা আরো উৎফুল্ল হলেন।
কাউন্সিলম্যানকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বহুজাতিক এই সমাজে বাঙালিদের মেধা আর শ্রমের মূল্যায়ন নানাভাবে ঘটছে। রাস্তার নামকরণে তা আরো ভিন্নভাবে দৃশ্যমান হলো। আমি আশা করছি, প্রিয় মাতৃভূমির চলমান উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির স্বার্থে প্রবাসীরাও ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।
এ অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজনের নামোল্লেখ করে কাউন্সিলম্যান জিনারো ধন্যবাদ জানানোর সময় তুমুল হৈচৈ শুরু হয়। আপত্তি উঠে যে, সত্যিকার অর্থে যারা কমিউনিটির উন্নয়নে মূলধারায় কাজ করছেন, তারা উপেক্ষিত হয়েছে। এ অবস্থায় বিব্রত কাউন্সিলম্যান নিজের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেন এবং বলেন, শীঘ্রই সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করা হবে-যারা এই রাস্তার নামকরণে নানাভাবে সহায়তা করেছেন।
কাউন্সিলম্যান জিনারো নামফলক নিয়ে আসার আগে এই নামকরণের কৃতিত্ব নিয়ে অনেকে বক্তব্য দিয়েছেন। ফলে এক ধরনের উত্তেজনার মধ্যেই কাউন্সিলম্যান পুলিশ ডেকে নিজ ব্যবস্থাপনায় উদ্বোধনী পর্বটি নিজে পরিচালনা করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন স্টেট এ্যাসেম্বলীওম্যান জেনিফার রাজকুমার, ডেভিড ওয়েপ্রিন, কুইন্স কাউন্টি ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এ্যাট লার্জ এটর্নী মঈন চৌধুরী, ডেমক্র্যাট মোহাম্মদ আমিনুল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার সাদেক প্রমুখ।
এক পর্যায়ে জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির পক্ষ থেকে ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মোহাম্মদ আলিমসহ কয়েকজন কাউন্সিলম্যানকে কমিউনিটির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতাসূচক ক্রেস্ট প্রদান করেন। শেষে শ্রীচিন্ময় সেন্টারের শিল্পীরা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের পর মহান একুশের অবিস্মরণীয় সেই ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-আমি কী ভুলিতে পারি’-গানটি পরিবেশ করেন।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে এই প্রথম ‘লিটল বাংলাদেশ এভিনিউ’ নামক নিজস্ব একটি জায়গা তৈরী হলো। উদ্বোধনী সমাবেশের সূচনালগ্নে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু সময় নিরবতা পালন করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল