দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ইউরোপের দেশ গ্রিসে বসবাসরত অনিয়মিত বাংলাদেশিদের বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। গত ১২ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশিদের আবেদনের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম খুলে দেওয়ার পরই আবেদন করা শুরু করেছেন অনিয়মিত বাংলাদেশিরা। ইতিমধ্যে তিনজন বাংলাদেশির আবেদন গ্রহণ করে অস্থায়ী রেসিডেন্স সংক্রান্ত একটি নিশ্চিতকরণ সনদ প্রদান করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের দূতাবাসের সুদীর্ঘ দুই বছরের কূটনৈতিক তৎপরতার ফলশ্রুতিতে অবশেষে আমরা বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যকার যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল, সেটার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন হলো। যার ফলে এখানে আমাদের যে অনিয়মিতভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা ছিলেন, তাদের বৈধ হওয়ার একটা সুযোগ এসেছে।
তিনি বলেন, সমঝোতা স্মারকের বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে এবং আইনের বিভিন্ন জটিলতা সব নিরসন হয়ে অবশেষে চলতি বছরের গত ১২ জানুয়ারি থেকে গ্রিক সরকার সেই বহুল প্রতীক্ষিত যে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, সেটা চালু করেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে বসবাসরত অনিয়মিত বাংলাদেশিরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন গ্রহণ হলে অস্থায়ী রেসিডেন্ট কার্ড (বেবুয়সি) ই-মেইলে পেয়ে যাবেন। আবেদনকারীরা যেসব কাগজপত্র জমা দেবেন, সেগুলো সরকার যাচাই-বাছাই করে এটার সঠিকতা নিরূপণ করার পরেই তাদের রেসিডেন্ট কার্ড দেয়া হবে।
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, গ্রিসে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিতভাবে অবস্থান করায় বাংলাদেশে যেতে পারছেন না, তাদের পরিবারের সাথে দেখা করতে পারছেন না, তারা কিন্তু অস্থায়ী রেসিডেন্ট কার্ড পেয়েই বাংলাদেশে যেতে পারবেন। ঘুরে আসতে পারবেন। গ্রিসেও সব ধরনের কাজ করতে পারবেন।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আবেদনের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ বলেন, অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কিন্তু কাগজপত্রগুলা আপলোড করে আবেদন করতে হবে। যে কোনো ধরনের সাহায্যের দরকার হলে অন্য কোথাও না গিয়ে দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান তিনি।
নিজের কোনো ধরনের তথ্য ও দলিলপত্র কাউকে দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, কোনো বাংলাদেশি নাগরিক অতি উৎসাহী হয়ে যেনো কোনো দালাল বা প্রতারক দ্বারা প্রতারিত না হোন এবং বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ও প্রতারক চক্রের প্ররোচনার শিকার যাতে না হতে হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
এদিকে বৈধ হওয়ার সহজ প্রক্রিয়া নিয়ে গত মঙ্গলবার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এতে বলা হয় হয়, এই প্ল্যাটফর্মে আবেদনের জন্য দুই বছরের বেশি মেয়াদযুক্ত বাংলাদেশি পাসপোর্ট, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বা এর পূর্ব থেকে গ্রিসে অবস্থানের প্রমাণপত্র, গ্রিসের একজন চাকরিদাতা কর্তৃক প্রদত্ত নিয়োগের ইচ্ছাপত্র, আবেদন ফি (পারাবোলো) ৭৫ ইউরো (নির্ধারিত ২১৪৮ কোডে) জমা করে তার কোড সংগ্রহ, নিজ নামে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর, ব্যক্তিগত সক্রিয় ই-মেইল আইডি থাকতে হবে। এসব ডকুমেন্টস থাকলেই একজন অনিয়মিত বাংলাদেশি এই বৈধতার আওতায় চলে আসতে পারবেন।
বৈধতা দেওয়ার এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে গ্রিসে বসবাসরত উপযুক্ত এবং আগ্রহী বাংলাদেশি নাগরিকরা দূতাবাস থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নিজ নিজ পাসপোর্ট সত্যায়িত করার মাধ্যমে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন। দ্বিতীয় ধাপে দূতাবাসে নিবন্ধনকৃতদের গ্রিক সরকার কর্তৃক চালুকৃত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রাথমিক তথ্য দিয়ে বৈধতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন সাবমিট করার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার নিজ ই-মেইল আইডিতে বৈধতা লাভের জন্য আবেদনের সনদ প্রেরণ করা হবে, যা স্মার্ট কার্ড রেসিডেন্স পারমিট ইস্যু না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প রেসিডেন্স পারমিট হিসেবে কার্যকর থাকবে। এই বিকল্প রেসিডেন্স পারমিট দিয়ে উক্ত আবেদনকারী যেকোনো ধরনের চাকরি লাভসহ সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন এবং বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করতে পারবেন। আগামী ছয় মাস ধরে এই বৈধকরণ প্রক্রিয়া চলবে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই