মহাবিশ্বের বিশালতার মাঝে প্রতিনিয়ত আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন নতুন রহস্য। এরই অংশ হিসেবে এবার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের প্রতিবেশী একটি ছোট ছায়াপথ ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে। ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইএসএর গাইয়া মহাকাশ যান থেকে সংগৃহীত ডেটা বিশ্লেষণ করে এ চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এই গবেষণা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে সম্মানজনক বিজ্ঞান সাময়িকী The Astrophysical Journal Supplement Series-এ।
এই ভেঙে পড়া ছায়াপথটির নাম স্মল ম্যাগেলানিক ক্লাউড (এসএমসি)। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় দুই লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এবং দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চারপাশে আবর্তিত হচ্ছে। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, এসএমসি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এর কারণ হচ্ছে কাছাকাছি থাকা আরেকটি বড় ছায়াপথ লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউড (এলএমসি), যার শক্তিশালী মহাকর্ষীয় টানে ধীরে ধীরে ছায়াপথটি ভেঙে যাচ্ছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসএমসি-তে থাকা অসংখ্য নক্ষত্র এখন ছায়াপথটির দুই পাশে ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি কিছু নক্ষত্র এলএমসির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আবার কিছু দূরে সরে যাচ্ছে। বিষয়টি এমনভাবে দেখা যাচ্ছে যেন কারও টানেই এদের ছায়াপথ থেকে আলাদা করে নেওয়া হচ্ছে।
জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী কেনগো তাচিহারা বলেন, ছায়াপথটিকে ঘিরে গভীর বিশ্লেষণ করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এটি ভেঙে যাচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এসএমসি-র নক্ষত্রগুলো এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, যেন কেউ তাদের টেনে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। এটা আসলে এলএমসির মহাকর্ষের প্রভাবে ঘটছে, যার ফলে এসএমসি ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
গবেষকরা আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য সামনে এনেছেন। তারা জানান, এসএমসি ছায়াপথের অভ্যন্তরে থাকা বিশালাকার কিছু নক্ষত্র ছায়াপথটির অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান নয়—যেটি একধরনের অস্বাভাবিক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এলএমসি ও এসএমসি হলো আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সবচেয়ে কাছের এবং সবচেয়ে পরিচিত প্রতিবেশী ছায়াপথগুলোর মধ্যে দুটি। প্রায় ৩০টি ছোট গ্যালাক্সি রয়েছে যারা মিল্কিওয়ের প্রতিবেশী হিসেবে ঘুরছে। এর মধ্যে এসএমসি ছোট এবং বামন গ্যালাক্সি হলেও তা অত্যন্ত উজ্জ্বল, এবং দক্ষিণ গোলার্ধ ও বিষুবরেখার নিকটবর্তী অঞ্চল থেকে খালি চোখেই দেখা যায়।
এই চাঞ্চল্যকর পর্যবেক্ষণগুলো আরও একবার প্রমাণ করল যে, মহাকাশের রহস্যময়তা অবসানের নয় বরং তা প্রতিনিয়ত বিস্ময় জাগিয়ে চলেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল