সম্প্রতি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, পৃথিবী থেকে ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে সিংহ (Leo) নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত একটি গ্রহ ‘K2-18b’-এর বায়ুমণ্ডলে দুটি রাসায়নিক যৌগ পাওয়া গেছে। যৌগ দুটো হলো- ইমিথাইল সালফাইড (DMS) ও ডাইমিথাইল ডিজালফাইড (DMDS)। এই দুটি উপাদান সাধারণত পৃথিবীতে শুধু জীবিত এককোষী প্রাণীর মাধ্যমেই তৈরি হয়, বিশেষ করে সামুদ্রিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন থেকে।
এ আবিষ্কারের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক নিক্কু মধুসূদন বলেছেন, এটি এখন পর্যন্ত সৌরজগতের বাইরে জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত। তিনি বলেন, ‘বহু বছর পর হয়তো আমরা এই মুহূর্তকেই স্মরণ করব—যখন আমরা ‘জীবন্ত মহাবিশ্ব’ খুঁজে পাওয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছাব।’
তবে বিজ্ঞানীরা এখনই নিশ্চিত কিছু বলতে পারছেন না। কারণ ইমিথাইল সালফাইড ও ডাইমিথাইল ডিজালফাইড-এর অস্তিত্ব অন্য কোনো রসায়নিক প্রক্রিয়ায়ও তৈরি হতে পারে। জীবনের উপস্থিতি ছাড়াও।
দুই বছরের পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে মহাকাশে স্থাপন করা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এই যৌগগুলোর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রহটি তার নক্ষত্রের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় টেলিস্কোপ আলো বিশ্লেষণ করে জানাতে পারবে, বায়ুমণ্ডলে আসলে কী কী উপাদান রয়েছে।
গত এক দশকে নানা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও গবেষণামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাণের সন্ধানে মানুষের সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে গেছে। যেমন ২০২০ সালে এক গবেষকদল শুক্র গ্রহের মেঘে ‘ফসফিন’ নামের একটি গ্যাস খুঁজে পায়, যা সাধারণত জীব বৈচিত্র্যের সাথে যুক্ত। এছাড়া মঙ্গলে গত এক দশক ধরে ঘুরে বেড়ানো নাসার কিউরিওসিটি রোভার সম্প্রতি কিছু জৈব উপাদান খুঁজে পেয়েছে, যেগুলো সাধারণত জীবিত কোষ পচে যাওয়ার সময় তৈরি হয়। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু এইসব উপাদান দেখেই নিশ্চিত করে বলা যায় না সেখানে প্রাণ আছে। এটা সম্ভাবনার বিষয়।
এদিকে, আরও উন্নত প্রযুক্তির টেলিস্কোপ তৈরি হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারে (SKA) এবং চিলির আতাকামা মরুভূমিতে এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ (ELT) ভবিষ্যতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রাণ খোঁজার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা হচ্ছে ২০১৬ সালে শুরু হওয়া ‘ব্রেকথ্রু লিসেন’ প্রকল্প, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন বড় টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশ থেকে সিগন্যাল বা ‘টেকনো-সিগনেচার’ খোঁজা হচ্ছে। যদিও এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত কিছু পাওয়া যায়নি।
নাসার নতুন দুটি মিশন—ইউরোপা ক্লিপার এবং হ্যাবিটেবল ওয়ার্ল্ডস অবজারভেটরি—ভবিষ্যতে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে আরও তথ্য দিতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা একমত, নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া সহজ নয়। কেউ কেউ বলছেন, একমাত্র যদি মঙ্গল থেকে কোনো প্রাণী এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বলে “হাই”, তবেই শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে!
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল