একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানাবিধ কারণে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠন হয়নি দীর্ঘ ৩ বছর। নির্বাচনে ১৬ আসনের জয়ের চমকের পাশাপাশি আরেকটি চমক দেখানোর ইঙ্গিত দিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
যুবলীগের আহবায়ক কমিটি ভেঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। তবে এ বিষয়ে মেয়র নাছির যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে মেয়র আ জ ম নাছির বিস্তারিত আলোচনা করবেন বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে নগর যুবলীগের নির্বাচনোত্তর মতবিনিময় সভায় জানান।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন আরো বলেন, দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। নির্বাচনের জন্য এতোদিন কমিটি নিয়ে চিন্তা করা হয়নি। ঢাকায় গেলে যুবলীগ চেয়ারম্যানের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করব। দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা যায় সে প্রচেষ্টা চালাবো।
তিনি বলেন, রাজনীতিতে নেতাকর্মীর কমতি নেই। কমতি রয়েছে কেবল গুণগত রাজনীতিকের। এবার কমিটিতে জনমুখী, নিবেদিত এবং দক্ষ, যোগ্য লোককে পদ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, দলের জন্য যাদের কন্ট্রিবিউশন এবং কমিটমেন্ট আছে তাদেরকে সুযোগ দেয়া হবে। সুতরাং জনগণের জন্য যারা কাজ করবে তারা দৃষ্টিতে থাকবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শীঘ্রই হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এ নিয়ে শুরু হয়েছে নির্বাচন পরবর্তীতে ব্যাপক আলোচনা-গুঞ্জনও। আহবায়ক কমিটির নেতাদের পাশাপাশি ওয়ার্ড নেতা-কর্মীদের মাঝে চলছে নানা উৎসাহও। দীর্ঘ ৩ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছিল হতাশা। ইতিমধ্যে নগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কারা গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন সেই বিষয়েও আলোচনা চলছে বিভিন্ন স্থানে।
তবে সিটি মেয়র নির্বাচনে যুবলীগের আহবায়কসহ শীর্ষ নেতাদের অনেকেই নীরব ভূমিকাসহ নানাবিধ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যা নিয়ে খোদ আ জ ম নাছির উদ্দিন নিজেই অবগত আছেন বলে সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রামের যুবলীগকে রাজনৈতিকভাবে আরো শক্তিশালী করতে দ্রুত এ কমিটি ঘোষনা করা হচ্ছে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে নেতা-কর্মীদের কাছে। তবে আওয়ামীলীগের কোন্দলের প্রভাবে নগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কমিটিও ঝুলে আছে দীর্ঘ সময় ধরেই। দ্রুত সব কমিটি হলে তৃনমূলের নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হবে বলে জানান অধিকাংশ নেতা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ৯ বছর পর আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেভাবে সক্রিয় থাকার কথা ছিল পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় তেমন চাঙ্গাভাব ছিল না নেতা-কর্মীদের মধ্যে। কোন প্রকার দায়সারাভাবে ওয়ার্ড ও থানা কমিটির কার্যক্রম চালানো হয়েছিল।
তারা আরও বলেন, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিটির আহবায়কসহ বেশ কয়েকজন নেতার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। এতে আগামীতে যুবলীগের কমিটির নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের নেতা-কর্মীদের মাঝে। গত ২০১৩ সালের ৯ জুলাই মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহবায়ক ও দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম, মাহবুবুল হক সুমন যুগ্ম-আহবায়ক করে ১০১ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এটি তিন মাসের মধ্যে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করে সম্মেলন করার কথা ছিল। বর্তমানে তিন মাসের চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটি ২ বছর ৫ মাস পার হয়েছে। এই কমিটি গত দুই বছরে চারটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করে। সেগুলো হল ৪০ নম্বর ওয়ার্ড, ৪১ নম্বর ওয়ার্ড, উত্তর পাঠানটুলি ওয়ার্ড এবং ৯ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড।
১৯৯৮-৯৯ সালের দিকে মহানগর যুবলীগের তৎকালিক মাহমুদুল হক ও চন্দন ধরের আহবায়ক কমিটি ৪১টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করলেও তাদের পরে নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ডে আর কোন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। তাদের পরে ২০০৩ সালে ঘোষিত চন্দন-মশিউর কমিটি ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে মাত্র চারটি ওয়ার্ডে কমিটি ঘোষণা করেছে। ২০১৩ সালে ৯ জুলাই গঠন করা বর্তমান আহবায়ক কমিটিও ওয়ার্ড পর্যায়ে সবগুলো কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি।
চন্দন-মশিউর কমিটির ন্যায় গত দুই বছরে এই কমিটি মাত্র চারটি ওয়ার্ডে কমিটি ঘোষণা করেছে। এরপর ২০০৩ সালে এ্যাডভোকেট চন্দন ধরকে সভাপতি এবং মশিউর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটি প্রায় ১০ বছর ক্ষমতায় থেকেও ওয়ার্ড ও থানা কমিটি করতে পারেননি।
বিডি-প্রতিদিন/ আব্দুল্লাহ তাফসীর