চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) উদ্যোগে রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে নির্মিত বিশেষায়িত গবেষণা তরী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে তিনি এ গবেষণা তরী উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে গবেষণা তরীর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হল।
উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য গবেষণা প্রয়োজন। ভাসমান এ তরী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গবেষণা তরী উদ্বোধনকালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার, সিভাসু উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এম নূরুল আবছার খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ।
সিভাসু সূত্রে জানা যায, প্রায় ৩ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই গবেষণাতরীতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসহ ৩টি ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। সতের মিটার দৈর্ঘ্য ও সাত মিটার প্রস্থবিশিষ্ট দ্বিতল এ গবেষণাতরীটির প্রস্তুতকারী দেশ সুইডেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে এটি কাপ্তাই লেকে নামানো হয়। গবেষণাতরীটির স্থিতিশীলতা ও হাল কাঠামো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগ দ্বারা পরীক্ষিত ও অনুমোদিত।
সিভাসুর উপপরিচালক (জনসংযোগ) খলিলুর রহমান বলেন, ‘দেশে এই ধরনের উদ্যোগ এটিই প্রথম। এ গবেষণাতরীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে উন্মোচিত হলো নতুন এক মাইলফলক। এটি সিভাসু’র শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে। বিশেষায়িত গবেষণাতরীর মাধ্যমে বহুমুখী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে মালয়েশিয়া সরকার তাদের কৃত্রিম হ্রদ ‘লেক কেনিয়র’-এর হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। আর সেই তরীর আদলে সিভাসু’র এই গবেষণাতরীটি নির্মাণ করা হয়েছে।’
জানা যায়, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে কাপ্তাই লেকের অনেক মৎস্যপ্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং কিছু প্রজাতি বিলুপ্তির আশংকায় আছে। বিলুপ্ত মৎস্যপ্রজাতির মধ্যে রয়েছে-মহাশোল, পিপলা শোল, বাঘাআইড়, নান্দিনা ইত্যাদি। বিলুপ্তির আশংকার তালিকায় আছে- সরপুঁটি, পাবদা, গুলসা, বাচুয়া ও ভঙ্গন বাটা প্রভৃতিসহ ১৮টি প্রজাতি। কাপ্তাই লেক এক সময় কার্প জাতীয় মাছের প্রজননের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। ১৯৬৫-৬৬ সালে এই হ্রদে প্রাপ্ত মাছের মধ্যে ৮১ শতাংশই ছিল কার্প জাতীয়। অথচ বর্তমানে ৯০ শতাংশই হলো চাপিলা ও কাচকি।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার