চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, ‘শত বছর আগের সৃষ্টি এই নগর। অতীত থেকেই এই নগর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে আসছে। অপরিকল্পিত নগরায়নের খেসারত এখন আমাদের সকলকেই দিতে হচ্ছে। তবে আমি চাই, নগরবাসীকে একটি সুন্দর, সুস্থ ও গ্রিন-ক্লিন সিটি উপহার দিতে। এ লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজও করে যাচ্ছি।’
মঙ্গলবার দুপুরে আন্দরকিল্লার কেবি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে চসিকের গত চার বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়–য়া, মেয়রের একান্ত সচিব আবুুল হাশেম প্রমুখ।
সিটি মেয়র বলেন, ‘নগরের উন্নয়নে আমরা অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এর মধ্যে ৭১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন করা হচ্ছে ‘বন্যা ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা সমুহের উন্নয়ন এবং নালা, প্রতিরোধ দেয়াল, ব্রিজ ও কালভাট নির্মাণ-পুননির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প, ১২০ কোটি টাকায় করা হচ্ছে ‘নগরের অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প, ৪২০ কোটি ৯৫ লাখ টাকায় করা হচ্ছে সড়ক ও ব্রিজ সমুহের উন্নয়নসহ আধুনি যান যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সড়ক আলোকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্প, ১২২৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে ‘নগরের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং বাস ট্রাক টার্মিনাল’।’
তিনি বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন নগর গড়তে নেয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা। অতীতে ১ হাজার ৩৭৫টি খোলা ডাস্টবিন ছিল। সেখান থেকে ৮২৫টি অপসারণ করা হয়েছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে রাতে বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। বিতরণ করা হয়েছে ৯ লাখ বিন। নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৯৭২ জন পরিচ্ছন্নকর্মী।’
তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনে ভোগান্তি নিরসনে পর্যায়ক্রমে নামানো হবে ২০০ এটি বাস। প্রথম দফায় আগামী জানুয়ারি থেকে এস আলম গ্রæপ তিন রঙের ১০০ এসি বাস চালু করবে। নগরের ৩ রুটে চলবে এসব বাস। ইতোমধ্যে বাস থামার জায়াগাও নির্ধারণ করা হয়েছে। অভিজ্ঞদের নিয়ে বাস ভাড়া নির্ধারণ করার কাজ চলছে।’
তিনি বলেন, ‘অতীতের চেয়ে বর্তমানে নগরের সড়ক উন্নত। অতীতে নগরে পিচঢালা সড়ক ছিল ৫৬০ কিলোমিটার (কিমি), বর্তমানে ৮১৬ কিমি, অতীতে কনক্রিটের সড়ক ছিল ২২২ কিমি, বর্তমানে ৩২৮ কিমি, অতীতে পাকা নালা ছিল ৬৮৩ দশমিক ৫৫ কিমি, বর্তমানে ৯৪৬ দশমিক ৫ কিমি, ফুটপাত ছিল ১৪৬ দশমিক ০৭ কিমি, এখন ২৮৭ কিমি, অতীতে প্রতিরোধ দেয়াল ছিল ৮০ দশমিক ২০ কিমি, এখন ৯৯ কিমি, অতীতে ব্রিজ ছিল ১৮৮টি, এখন ২১৯টি, গভীর নলকূপ ছিল ৩৭২টি, এখন ৪২৩টি, কালভার্ট ছিল ৯৩২টি, এখন ১ হাজার ৪৮টি।’
নগর পিতা বলেন, ‘নগরের ৯৫২ কিমি সড়ক (৮০ শতাংশ) আলোকায়নের আওতায় আনা হয়েছে। ১ হাজার ৩০৪ কিমি সড়কে ৬৪ হাজার ৬৮৩টি এলইডি বাতি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এনার্জি বাতি আছে ১৫ হাজার ২৭৩টি, এলইডি বাতি আছে ৪ হাজার ৪০টি, মেটাল হ্যালাইড আছে ১৯১টি।’
কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক ইজারা প্রসঙ্গে সিটি মেয়র বলেন, ‘সেনাবাহিনী জায়গাটি শিশুপার্ক করার জন্য চসিককে দিয়েছিল। শিশুপার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চসিকের চুক্তিটা নবায়নযোগ্য। তাদের আধুনিক রাইডের শর্ত দিয়েছি। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তারা আধুনিক রাইড সংগ্রহ করছে। আগ্রাবাদ শিশুপার্ক নিয়ে মামলা চলছে। তবে নগরে খেলার মাঠ বৃদ্ধি করতে আমাদের পরিকল্পনা আছে।’
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার/ রেজা মুজাম্মেল