চট্টগ্রামে বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের অংশগ্রহণে বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপিত হয় বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী ও বিজয় দিবসের নানা অনুষ্ঠান। সকাল ৮টায় নগর পুলিশের একটি পচৗকস দলের ‘গার্ড অব অনারের’ মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রামের সরকারি বেসরকারি সকল ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয় সরকারি ভবনে।
জানা যায়, পুলিশ ও র্যাবের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোর থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকালে শহীদ বেদীতে প্রথম শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকসহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। এরপর নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তাছাড়া, চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনগুলো দিনভর নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৫০তম বিজয় দিবস উদযাপন করেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু করে। বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মুখস্থ শেখ রাসেল চত্বরে আয়োজিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগরের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরোয়ার কামাল। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা স্মারক ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়।
বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনও তৎপর। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন বলেই আজ এই স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই, উজ্জীবিত হই। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আপনাদের পাশে থাকতে পেরে আমরা আনন্দিত।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্যারেড ময়দানে দিনব্যাপী বিজয় দিবস ও সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, সমাজ কল্যাণ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম, কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, হাসান মুরাদ বিপ্লব, মো. জাবেদ, শৈবাল দাশ সুমন, গাজী শফিউল আজিম, মো. আতাউল্লাহ চৌধুরী, নুরুল মোস্তফা টিনু, সংরক্ষিত কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসী, ফেরদৌসী আকবর, রুমকী সেনগুপ্ত, হুরে আরা বেগম, শাহীন আক্তার রোজী, তছলিমা বেগম, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, আইন কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, অতিরিক্ত হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী, রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী প্রমুখ।
মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের আজকের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পেছনে রয়েছে মূলতঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান। তিনি বেঁচে থাকলে দেশ ইতোমধ্যেই উন্নত দেশে পরিণত হতো। কিন্তু ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে জাতিকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে এবং উন্নত দেশের স্বপ্নকে ধ্বংস করা হয়েছে। আজ তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ, বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ আজ জাতির জনকের স্বপ্ন ছোঁয়ার দ্বারপ্রান্তে।
মহানগর আওয়ামী লীগ
বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রমুখ।
আলোচনা সভায় আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, এবার বিজয়ে ৫০ বছর উদযাপন করা হচ্ছে। এই দিনে প্রধানমন্ত্রী ভিশন ৪১ ঘোষণা করেছেন। এটি বাস্তবায়নে আমাদের সকলকেই একযোগে কাজ করতে হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তি, মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশে যাতে আর ক্ষমতায় না আসতে পারে সেজন্য আপনাদের কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। তারা আবারও মাথাচাড়া দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এখন আমাদের যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন