মিরাজ হলো রসুল (সা.)-এর একটি মোজেজা। মিরাজ তার বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক আশ্চর্যান্বিত ঘটনা। রসুল (সা.)-এর মিরাজ আসমান পর্যন্ত এবং আসমান থেকে আল্লাহপাকের পছন্দনীয় জায়গা পর্যন্ত সশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হওয়ার ঘটনা সত্য ও বাস্তব, তাতে জমহুরে ওলামায়ে কেরাম তথা উম্মতে মুসলিমের কোনো সন্দেহ নেই। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলেপাক (সা.) বলেন, আমি (মিরাজ থেকে আসার পর) নিজেকে খানায়ে কাবার হাতিমে দেখলাম, আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আরবের কুরাইশ লোকজন আমাকে মিরাজের ঘটনাবলি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিল। তারা আমাকে বায়তুল মোকাদ্দাস সম্পর্কে এমন কতিপয় বিষয় প্রশ্ন করল, যেগুলো আমার স্মরণে ছিল না। ফলে আমি অস্থির হয়ে পড়লাম যে, এর আগে অনুরূপ অস্থির আর কখনো হইনি। তখন আল্লাহপাক বায়তুল মোকাদ্দাসকে আমার সামনে উপস্থিত করলেন। ফলে আমি মসজিদকে লক্ষ্য করতে থাকি, তারা বায়তুল মোকাদ্দাসের যে কোনো প্রশ্ন করত আমি তা থেকে উত্তর দিতাম আর আমি মিরাজের রাতে নিজেকে নবীগণের এক জামাতের মধ্যে দেখতে পাই। তখন দেখি, হজরত মূসা (আ.) দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছেন। তাঁকে একজন মধ্যম আকৃতি থেকে সামান্য লম্বা মনে হলো যেন (ইয়েমেন দেশের) শানুয়া গোত্রের লোক। আর দেখলাম, হজরত ঈসা (আ.)-কে, তিনিও দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছেন। লোকজনের মধ্যে উরওয়া বিন মসউদ সাকাফি হলেন তাঁর (ঈসা আ.)-এর অধিক সাদৃশ্য। আবার হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে দাঁড়ানো অবস্থায় নামাজ পড়তে দেখলাম। লোকদের মধ্যে তোমাদের সাথী অর্থাৎ আমিই তাঁর নিকটতম সাদৃশ্য। ইত্যবসরে নামাজের সময় হলো এবং আমি নামাজে তাদের ইমামতি করলাম। যখন নামাজ শেষ করলাম, তখন কেউ আমাকে বললেন, হে মুহাম্মদ! তিনি হলেন দোজখের দ্বাররক্ষী মালেক। তাকে সালাম করুন, হজরত রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি তার দিকে ফিরে তাকাতেই তিনি আমাকে আগে সালাম দিলেন। (মুসলিম শরিফ) (৪)। মিরাজ সম্পর্কে বোখারি ও মুসলিম শরিফে বিস্তারিত বিবরণ বর্ণিত হয়েছে। সংক্ষেপে নবুয়তের দ্বাদশ সালের রজব মাসের এক মহা শুভ রাতে কাবা শরিফের হাতিম থেকে বোরাকযোগে তাঁর ঐতিহাসিক অনুপম ঊর্ধ্বাগমন শুরু হয়। সঙ্গে ছিলেন হজরত জিব্রাঈল (আ.)। অতঃপর তিনি বায়তুল মোকাদ্দাসে তাশরিফ নেন। সেখানে তিনি আম্বিয়া আলাইহিস সালামের একদলের সঙ্গে নামাজে ইমামতি করেন। সেখান থেকে হজরত জিব্রাঈল (আ.) তাঁকে নিয়ে সপ্তাকাশ পর্যন্ত ক্রমে ভ্রমণ করেন। এ ক্ষেত্রে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.)-কে, দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া ও ঈসা (আ.)-কে, ষষ্ঠ আসমানে হজরত মূসা (আ.)-কে, সপ্তম আসমানে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন। তিনি তাঁদের সবাইকে সালাম করেন। তাঁরা তাকে নেককার সন্তান ও নেককার নবী বলে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করলেন এবং দোয়া করলেন। তবে হজরত ইব্রাহিম (আ.) এবং হজরত আদম (আ.) তাঁকে ইবনে সালেহ ও নবীয়ে সালেহ বলে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করে দোয়া করেন। অতঃপর হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সিদরাতুল মুন্তাহায় নেওয়া হয়। তিনি সেখানে যা কিছু দেখার দেখে নেন। অতঃপর তাঁকে বায়তুল মামুর নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সফরে তাঁর ও তাঁর উম্মতের প্রতি ৫০ ওয়াক্ত নামাজ সওয়াব হিসেবে এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হিসেবে ধার্য হয়। অতঃপর তাকে বেহেশতে প্রবেশ করানো হয়। সেখানে যা কিছু দেখার তিনি সেসব পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি দোজখ, অন্যান্য নিয়ামত ও বিভিন্ন আশ্চর্য অবস্থা অবলোকন করেন, যা কিছু দেখার ইচ্ছা মহান আল্লাহপাকের ছিল। যেমন- ইরশাদ হয়েছে, তিনি তাঁর বান্দার প্রতি ওহি করলেন এবং তিনি (হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহান আল্লাহর সৃষ্ট নিদর্শনাবলী অবলোকন করেন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে মিরাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য মানার তৌফিক দান করুন। আমিন।