ওয়াদা রক্ষা করা সব মুসলমানের জন্য জরুরি। হাদিস শরিফে ওয়াদা রক্ষা করার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রসুল (সা.) সব সময় ওয়াদা রক্ষা করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু হাসমা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নবী করীম (সা.)-এর নবুয়ত লাভের পূর্বে আমি তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু ক্রয় করেছিলাম। যার কিছু মূল্য আদায় করা আমার ওপর বাকি রয়ে গিয়েছিল। আমি তাঁকে বললাম, তা আমি এ স্থানে নিয়ে আসব। কিন্তু আমি সে ওয়াদার কথা ভুলে গেলাম। তিনদিন পর তা আমার স্মরণ হওয়ায় আমি ওই স্থানে এসে দেখলাম, তিনি সেখানেই উপস্থিত আছেন। তখন তিনি শুধু এতটুকু বললেন, তুমি তো আমাকে খুবই কষ্টে ফেলেছিলে। আমি তিনদিন পর্যন্ত এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। (আবু দাউদ)। এ বিষয়ে আরও এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদা আমার মাতা আমাকে ডাকলেন। তখন রসুল (সা.) আমাদের গৃহে বসাছিলেন। মাতা আমাকে বললেন, এদিকে এসো। আমি তোমাকে একটি বস্তু দেব। তখন রসুল (সা.) আমার পক্ষ থেকে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি তাকে কি দিতে চাচ্ছ। মাতা বললেন, আমি তাকে একটি খেজুর দিতে চাচ্ছি। তখন রসুল (সা.) তাকে বললেন, জেনে রেখ, এরূপ নিয়ত করে যদি তুমি তা তাকে না দিতে, তবে তোমার আমলনামায় মিথ্যা গুনাহ লিখা হতো। আবু দাউদ। নবী করীম (সা.)-এর ওফাতের পর সাহাবায়ে কেরামও ওয়াদা রক্ষার প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছেন। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নবী করীম (সা.) ইন্তেকাল করলে এবং প্রথম খলিফা হজরত আবুবকর (রা.)-এর কাছে বাহরাইনের গভর্নর হজরত আলা ইবনে হাজরামীর পক্ষ থেকে মালামাল এলে হজরত আবুবকর (রা.) বললেন, নবী করীম (সা.)-এর ওপর কারও ঋণ অর্থাৎ কোনো কিছু পাওনা থাকলে অথবা কারও সঙ্গে তাঁর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি থাকলে তারা যেন আমার কাছে আসে। হজরত জাবের (রা.) বলেন, আমি বললাম, রসুল (সা.) আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমাকে এতগুলো এতগুলো এতগুলো দান করবেন। অর্থাৎ তিনি তিনবার তাঁর হস্তদ্বয় প্রসারিত করেছিলেন। হজরত জাবের (রা.) বলেন, অতঃপর হজরত আবুবকর (রা.) আমাকে এক কোষ দিলেন। আমি গুনে দেখলাম, পাঁচশত দেরহাম। তখন তিনি বললেন, এ পরিমাণে আরও দুইবার নাও। (বুখারি ও মুসলিম)। প্রিয় পাঠক! চেষ্টা করেও যদি ওয়াদা রক্ষা করা না যায় তাহলে গুনাহ হবে না। হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.) বর্ণনা করেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি তার কোনো মুসলমান ভাইকে কোনো ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং এরূপ নিয়ত রাখে যে, সে তা পূরণ করবে; কিন্তু পরে কোনো ঘটনাচক্রে সে তা পূরণ করতে পারেনি। এতে তার কোনো গুনাহ হবে না। -আবু দাউদ, তিরমিযি। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, বাইতুর রহমত জামে মসজিদ, গাজীপুরা, টঙ্গী।