গৃহপরিচারক ও গৃহপরিচারিকা অর্থাৎ যাদের সাধারণ ভাষায় আমরা গৃহের কাজের লোক বলি তাদের প্রতি সদাচরণ করা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। যারা এ সুন্নতের বরখেলাপ করেন তারা গোনাহের পথই বেছে নেন। খাদেমদের সঙ্গে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে যেমন সদাচরণ করতেন তেমনি তার অনুসারীদেরও একই শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি খাদেম বা কাজের লোকদের সম্পর্কে বলেছেন, 'এরা তো তোমাদেরই ভাই। আল্লাহপাক এদের তোমাদের অধীন করেছেন। তোমরা যে খাদ্য খাও, তাদেরও তেমন খাদ্য দিও। আর তোমাদের কাপড়-চোপড়ের মতো ওদেরও পরতে দিও। তাদের সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ দিও না। যদি দিয়ে ফেল, তবে তোমরাও তাদের সাহায্য কর।' (মুসলিম)
আমাদের মধ্যে অনেকে নিজেদের মুমিন বলে পরিচয় দেন কিন্তু রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের প্রতি ততটা মনোযোগী নন। কাজের লোকের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো অনেকের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ আল্লাহর হাবিব, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাজের লোকদের সঙ্গে ক্ষমাশীল হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিরমিজি শরিফে বলা হয়েছে- এক লোক এসে রসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করছিল, ইয়া রসুলাল্লাহ! 'আমি আমার গোলাম বা খাদেমকে কয়বার মাফ করব? রসুল (সা.) চুপ থাকলেন। লোকটি তৃতীয় বার একই প্রশ্ন করলে উত্তরে রসুল (সা.) বললেন, প্রতিদিন সত্তরবার। (তিরমিযি), খাদেম বা কাজের লোকদের মারধর বা অসদাচরণের বিরুদ্ধে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী মনোভাব পোষণ করতেন তা রয়েছে মুসলিম, আবু দাউদ ও তিরমিযি শরিফে উলি্লখিত এক হাদিসে। একদিন রসুল (সা.) দেখলেন, তাঁরই এক সাহাবি আবু মাসউদ এক চাকরকে মারধর করছেন। তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন, শোন হে আবু মাসউদ! মনে রেখ, তুমি এ গোলামটির সঙ্গে যে অধিকার দেখাচ্ছ, মহান আল্লাহ এর চেয়েও বেশি তোমার ব্যাপারে শক্তিশালী ও অধিকারী। এমন কথা শুনে অনুতপ্ত সাহাবি তখনই তাকে মুক্ত করে দিলেন। রসুল (সা.) তাকে বললেন, এটি যদি তুমি না করতে তবে অবশ্যই তোমাকে আগুনে জ্বলতে হতো। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি)
আল্লাহ আমাদের গৃহপরিচারক ও পরিচারিকাদের সঙ্গে মানবিক আচরণের তৌফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামী গবেষক।