সৃষ্টির প্রতি দয়া করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য জরুরি। এ বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ সে ব্যক্তির ওপর দয়া করেন না, যে ব্যক্তি মানুষের ওপর দয়া করে না। (বুখারি ও মুসলিম)। হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একবার এক বেদুঈন (গ্রাম্য লোক) নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে দেখল যে, সাহাবায়ে কেরাম তাদের শিশু সন্তানদের চুমু খেয়ে আদর করছেন। তা দেখে সে বলল, তোমরা কি তোমাদের শিশু সন্তানদের চুম্বন কর? আমরা তো তা করি না। তখন নবী করিম (সা.) বললেন, আল্লাহ তোমাদের অন্তর হতে স্নেহ ও মমতা উঠিয়ে নিলে আমি কি তাতে বাধা দিতে পারি? (বুখারি ও মুসলিম)। অন্যান্য সৃষ্টিজীবের প্রতি দয়া করার পাশাপাশি নিজের কন্যাসন্তান থাকলে তাদের প্রতিও দয়া করতে হবে। হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, একদিন এক স্ত্রীলোক আমার কাছে আগমন করল। তার সঙ্গে তার দুটি কন্যাও ছিল। স্ত্রীলোকটি আমার কাছে কিছু খবার ভিক্ষা চাইল; আমি তাকে কিছু দিলাম। কিন্তু তখন সে নিজে না খেয়ে কন্যা দুটিকে দিল। নিজে কিছুই রাখল না। তারপর সে উঠে চলে গেল। এমন সময় নবী করিম (সা.) তাশরিফ আনলে আমি এ ঘটনাটি তাঁর কাছে বললাম। তিনি বললেন, যেসব ব্যক্তি কন্যা নিয়ে সমস্যায় পড়েছে এবং তদবস্থায় তাদের সঙ্গে এরূপ সদাচরণ করেছে, এ কন্যারা তার জন্য দোজখের আগুন হতে প্রতিরোধকারী হবে (বুখারি ও মুসলিম)। আরও এসেছে, হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দুটি কন্যার প্রাপ্তবয়স্কা হওয়া পর্যন্ত তাদের লালন-পালনের দায়িত্ব বহন করবে, আমি এবং সে ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে এভাবে একসঙ্গে থাকব। এ কথা বলে তিনি হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে দেখালেন (মুসলিম)। এতিম-বিধবাদের প্রতি দয়া করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নবী (সা.) অনেক হাদিস ইরশাদ করেন। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বিধবা এবং মিসকিনদের তত্ত্বাবধান করে, সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী তুল্য। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় রসুল (সা.) তাও বলেছেন যে, সে (বিধবা এবং মিসকিনদের তত্ত্বাবধানকারী ব্যক্তি) এমন রাত জাগরণকারী, যে আলস্য করে না এবং ওই রোজাদারের মতো, যে কখনো রোজা ভঙ্গ করে না (বুখারি ও মুসলিম)। অর্থাৎ এই পরিমাণ সওয়াব সে পাবে। মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : খতিব, বাইতুর রহমত জামে মসজিদ, গাজীপুরা, টঙ্গী।