রাজধানীর সন্নিকটে গাজীপুরের টঙ্গী কহর দরিয়াখ্যাত তুরাগ তীরে আগামী শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের মহাসম্মেলন ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এরই মধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাবলিগ অনুসারী মুসল্লিরা প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হতে শুরু করেছেন। আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হলেও বুধবার থেকেই ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিরা আসছেন।
২০ জানুয়ারি শুক্রবার অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে ২২ জানুয়ারি দুপুরের পূর্বে যে কোনো এক সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে ৫২তম বিশ্ব ইজতেমা। ইতোমধ্যে ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে তুরাগ নদীতে ৭টি ভাসমান পল্টুন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬০ একর জমির ওপর নির্মিত সুবিশাল প্যান্ডেলের কাজ, খুঁটিতে নম্বর প্লেট, খিত্তা নম্বর, মাস্তুরাত কামরা, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, তাশকিল কামরা, হালকা নম্বর ও খুটি নম্বর বসানোর কাজ আগেই শেষ করা হয়েছে। আগত মুসলি¬দের সুষ্ঠুভাবে বয়ান শোনার জন্য পুরো মাঠে শব্দ প্রতিধ্বনিরোধক ১৮০টি বিশেষ ছাতা মাইক স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের ফেলে যাওয়া ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
ইজতেমায় দ্বিতীয়পর্বে খিত্তাওয়ারি যেসব জেলার মুসল্লিদের অবস্থান : ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ঢাকা জেলার (খিত্তা নং-১-৫ ও ৭), মেহেরপুর (খিত্তা নং-৬), লালমনিরহাট (খিত্তা নং-৮), রাজবাড়ি (খিত্তা নং-৯), দিনাজপুর (খিত্তা নং-১০), হবিগঞ্জ (খিত্তা নং-১১), মুন্সিগঞ্জ (খিত্তা নং-১২, ১৩), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা নং-১৪, ১৫), কক্সবাজার (খিত্তা নং-১৬), নোয়াখালী (খিত্তা নং-১৭, ১৮), বাগেরহাট (খিত্তা নং-১৯), চাঁদপুর (খিত্তা নং-২০), পাবনা (খিত্তা নং-২১, ২২), নওগাঁ (খিত্তা নং-২৩), কুষ্টিয়া (খিত্তা নং-২৪), বরগুনা (খিত্তা নং-২৫) ও বরিশাল (খিত্তা নং-২৬) মুসল্লিরা অংশ নিবেন।
দ্বিতীয় পর্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি : ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে আইনশৃঙ্খলা জোরদারের লক্ষ্যে ইজতেমার ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ৬ হাজার পুলিশসহ র্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হবে। নিরাপত্তা জোরদার করতে র্যাবের কমিউনিকেশন উইংয়ের পক্ষ থেকে ১৮টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে ৪০টি ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। র্যাবের ইন্টেলিজেন্সের সদস্যরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ ইজতেমা মাঠে কোনো ধরণের নাশকতার ঘটনা যাতে না ঘটতে পারে সে ব্যাপারে কড়া নজরদারি রাখবেন। এছাড়াও ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে প্রত্যক্ষ করার জন্য ল্যাপটপ কম্পিউটারের স্ক্রিনে সার্বক্ষণিক নজর রাখবেন। আকাশে র্যাবের হেলিকপ্টার টহল এবং তুরাগ নদীতে নৌ টহল থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সতর্কাবস্থায় রাখা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে বসানো র্যাবের ৯টি ও পুলিশের ৫টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষক দল সার্বক্ষণিক বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পর্যবেক্ষণ করবেন।
আয়োজক কমিটির বক্তব্য: এ বিষয়ে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির অন্যতম জিম্মাদার প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। নির্দিষ্ট ১৬ জেলার মুসল্লিরা এ দফায় অংশগ্রহণ করবেন। যে সব জেলার মুসল্লিরা এ বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিবে সেই সব জেলার মুসল্লিরা আগামী ২০১৮ সালে অংশ নিতে পারবেন না। তবে বিদেশি মুসল্লিরা প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন। ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের পরিষ্কর পরিছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১৮ জানুয়ারি, ২০১৭/মাহবুব