মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে প্রলাদ বাড়ৈ নামে এক ফকিরের ভণ্ডামির শিকারে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নিজেকে অলেৌকিক শক্তির অধিকারি দাবি করে বাড়িতে ঝাড়-ফুঁক, তেল পড়া, মাটি পড়া দিয়ে চিকিৎসার নামে চালাচ্ছে অপচিকিৎসা। মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কমল বাড়ৈর ছেলে প্রলাদ বাড়ৈ এক সময় মাছ ধরে জীবন যাপন করতেন। ৪ মাস আগে হঠাৎ প্রচার করতে শুরু করেন তিনি অলেৌকিক শক্তি লাভ করেছেন। স্বপ্নযোগে সমস্ত রোগের চিকিৎসা করার জন্য অনুমতি পেয়েছেন। এরপর তার অনুগত কিছু লোককে দিয়ে প্রচার করান যে তিনি ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, প্যারালাইসিস, বাকপ্রতিবন্ধী, শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ সমস্ত রোগের চিকিৎসা করাতে পারেন এবং তার অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে শতভাগ নিরাময় সম্ভব।
এহেন প্রচারের জন্য বিভিন্ন এলাকায় একটি কর্মীবাহিনী তৈরী করেছেন। তারা বিভিন্ন মানুষের কাছে হাট-বাজারে প্রচার করে বেড়ায় 'প্রলাদ বাবা' সব ধরনের রোগীকে সুস্থ করে দিতে পারেন। অমুক গ্রামের এক ক্যান্সার রোগীকে তিনি সুস্থ করেছেন, তমুক গ্রামের এক বাকপ্রতিবন্ধীর মুখে কথা ফুটিয়েছেন। এভাবেই চটকদার প্রচারে সহজ সরল মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী দাবি করে বাড়িতে চিকিৎসা কেন্দ্র খুলে বসেছেন।
সরেজমিন তার বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, প্রলাদ বাড়ৈর বাড়ির অঙ্গিনায় কয়েক হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে। একজন সিরিয়াল লিখে রাখছেন। তার কাছেই নজরানা ২১ টাকা, এক প্যাকেট বিড়ি, একটি আগরবাতি,একটি মোমবাতি দিতে হয়। এরপর তিনি এগুলো রেখে রোগীর চিকিৎসা করানোর নামে শুরু করেন প্রতারণা। প্রতি রোগীকে এক মুঠো মাটি, এক বোতল তেল পড়া দিয়েই ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসা করেন। প্রতিদিন সিরিয়াল দিয়ে একহাজার রোগী দেখেন।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে ক্যান্সারের রোগী হারিস মাতুব্বর এসেছেন রোগ নিরাময়ের জন্য। তিনি জানান, 'মাটি পড়া ও তেল পড়া দিয়েছেন আমাকে। আর ৭ দিন পরে আবার দেখা করতে বলেছেন।'
প্রলাদ বাড়ৈর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, 'আমার লেখাপড়া নেই, আমি কিছুই জানি না, তারপরেও মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। 'ওনার' উছিলায় সমস্ত রোগ ভালো করে দিতে পারি।'
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার খোন্দকার ফরিদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে প্রশাসন অবগত আছেন। গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।