আনন্দও যে চোখ জলে কপোল ভাসিয়ে দিতে পারে তা আরেকবার প্রমাণিত হল। দীর্ঘ এক বছর পর নিখোঁজ মেয়েটিকে ফিরে পেয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। এ অশ্রু বেদনার নয়, আনন্দের। তার কান্না দেখে উপস্থিত অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। বোবা কান্না যেন সবাইকেই ঝাকুনি দিয়ে গেল। আর এ আনন্দ অশ্রু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যানে।
ফেসবুকের কল্যানে এক বছর পর নাড়ী ছেড়া ধনকে খুঁজে পেয়েছে হতভাগী মা। হতভাগা পিতা প্রায় ৩০ মিনিট মেয়ের নাক মুখ মাথায় মুখ ঘষে ঘষে কাঁদছিলেন। এমনতর ঘটনাটি ঘটেছে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী পূর্বপাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩ টায়।
সরেজমিন জানা গেছে, ইয়াছমিন আক্তার প্রকাশ বিজু নামের পাঁচ বছরের শিশু কন্যাটি এক বছর আগে বাড়ি থেকে হারিয়ে যায়। অনেক খুঁজে শেষে পাথরে বুক বাঁধে অভাগা বাবা-মা। ছোট্ট এই মেয়েটি ঠিকমত সবার নামও বলতে পারে না। তাই একপ্রকার সন্তানকে ফিরে পাবার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। তবে আশা ছাড়েননি মা।
অন্যদিকে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী থেকে খুটাখালীর পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মালয়েশিয়া প্রবাসী লাল মিয়ার স্ত্রী ফিরোজা বেগম শিশুটিকে পেয়ে দীর্ঘ ৬/৭ মাস ধরে লালন পালন করে আসছিলেন। এসময় তারা কক্সবাজার শহরে মেয়েটির খোঁজ খবর নিতে মাইকিংও করেন। কিন্তু হদিস না পাওয়ায় বিজুকে তাদের নিকটাত্বীয় একই এলাকার মৃত চাঁদ মিয়ার পুত্র কাঠ ব্যবসায়ী আবদুল কাদেরকে লালন পালনের দায়িত্ব দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৪ জানুয়ারি কাদেরের পুত্র খুটাখালী বাজারের ব্যবসায়ী রিদুয়ান স্থানীয় পত্রিকায় ছবিসহ খুটাখালীতে বিজু নামের শিশু পাওয়া গেছে শিরোনামের সংবাদ প্রকাশ করেন। এর পরও সঠিক কোন পরিচয় মেলেনি বিজুর। সম্প্রতি ইউনিয়নের ফুলছড়ি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক এনজিও সংস্থা দিগন্ত'র চেয়ারম্যান আনম রফিকুর রশিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তার নিজস্ব আইডিতে গত ১৯ জানুয়ারি বিজুর ছবিসহ তথ্য প্রকাশ করেন। যার শিরোনাম ছিল 'কোন কাননের ফুল, কেউ জানে না কেউ চিনে না।'
ফেইসবুকে ছবিসহ এই পোস্টটি দেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় বিজুর মামা আনম রফিকের ফেসবুক বন্ধু ফারুক রাইহান (সেনা সদস্য) পেইজটিতে লাইক দিয়ে তার মোবাইল নম্বর দেওয়ার অনুরোধ জানান। অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল নম্বর দেন রফিক। এসময় তিনি বিজুর নিকটাত্বীয় পরিচয় দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত খুলে বলেন। মেয়েটির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে বিজুর মা-বাবাকে খবর দেন। সে মোতাবেক বিজুর বাবা আবু তাহের, মা মনুয়ারা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার সময় ওই মোবাইল নম্বরে ফোন করে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী পশ্চিম পাড়া থেকে পাগলের মতো ছুটে আসেন চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী পূর্বপাড়া গ্রামে।
এক পর্যায়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে এরাই শিশু বিজুর আসল মা-বাবা। প্রথমে বিজু মা বাবাকে দেখে একটু মুচকি হাসে। পরে দীর্ঘক্ষণ মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদে।
পেশায় গরু ব্যবসায়ী তাহের বলেন, ভালো মানুষের হাতে পড়েছে বলে আজ মেয়েটিকে ফিরে পেয়েছি। তিনি ফেইসবুক, ইন্টারনেট-পত্রিকায় বিজুর ছবি ছাপানোর জন্যও সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বিজুর মা মনোয়ারা বলেন, তার ভাই ফারুক রায়হান ফেইসবুকে ছবি দেখে গত ১০ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে বিষয়টি জানান। এদিকে বিজুকে কাঠ ব্যবসায়ী কাদেরের পরিবার স্থানীয় শিখন স্কুলে গত একমাস আগে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন।
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে ফেসবুকের কল্যানে দেশে-বিদেশে অসংখ্য পরিবার তাদের হারানো স্বজনকে ফিরে পেয়েছে। এমনকি কয়েক যুগ পরও হারানো স্বজনকে ফিরে পাওয়ার রেকর্ড রয়েছে ফেসবুকের মাধ্যমে।
বিডি-প্রতিদিন/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫/ এস আহমেদ