ভারতের তামিলনাডুতে তুতিকোরিন শহরের কাছে সমুদ্রতটে প্রায় পঞ্চাশটির মতো তিমি সৈকতে এসে আছড়ে পড়ে মারা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও মৎস্যজীবীরা তাদের সমুদ্রে ফেরত পাঠালেও পরে তাদের অনেকগুলো আবার সৈকতে ফিরে আসে। যার বেশির ভাগ তিমিই পরে মারা যায়। তবে ঝাঁক বেঁধে তীরে এসে তারা কেন এভাবে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছেন, তা নিয়ে এখনও কোন স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকে ধারণা করছেন খাবারের সন্ধানে সৈকতের কাছে অগভীর সমুদ্রে এসে পড়েই ওই তিমিগুলো আটকে পড়েছিল। তবে তাদের সমুদ্রে নামিয়ে দেওয়ার পরও কেন আবার সৈকতে ফিরে আসলো তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
ভারতের দক্ষিণতম প্রান্তে তুতিকোরিনের কাছে যে তিরুচেন্দুর সৈকত, সেখানেই সোমবার রাত থেকেই আছড়ে পড়তে থাকে প্রায় একশো তিমির একটি ঝাঁক। জেলেরা সেই তিমিগুলোকে ঠেলে সাগরের জলে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করেন। কাছের মানাপাড গ্রামের লোকজনও তাতে হাত মেলান। কিন্তু বেশির ভাগ তিমিই আবার সৈকতে ফিরে আসে। সকালে দেখা যায় বেলাভূমিতে পড়ে আছে প্রায় পঞ্চাশটি তিমির নিস্পন্দ লাশ।
তিমির ঝাঁকের এই ধরনের প্রবণতা – যাকে বলে ‘বিচিং’ – তা অবশ্য নতুন কোনও ঘটনা নয় বলেই বলছেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের জুলিয়া ওয়াইল্ড। তার কথায়, "তিমিদের ঝাঁকে ঝাঁকে বিচিং সেই অ্যারিস্টটলের যুগেও ঘটেছে, তবে ওই গ্রীক দার্শনিকও তার পেছনের কারণটা খুঁজে পাননি।
কিন্তু এই যুগে বিজ্ঞানীদের ধারণা, অনেক সময় শিকার খুঁজতে গিয়ে সাগরের ভাঁটায় পড়ে তিমিদের ওই হাল হয়। সৈকতে পড়ে থাকা তিমিদের লাশে দেখা গেছে তাদের অনেকেরই পেট খালি থাকে। তা ছাড়া তিমি ভীষণ সামাজিক জীব, ঝাঁকের কেউ পথ হারালে অন্যরাও তাকে রক্ষা করতে সৈকতের দিকে তারা চলে আসে এবং আটকা পড়ে।
তবে তুতিকোরিনের ঘটনায় তিমিগুলো খাবারের সন্ধানেই মাঝসমুদ্রের গভীর জল থেকে সৈকতের কাছে অগভীর জলে চলে এসেছিল বলে বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের মেরিন বায়োলজিস্ট পুণ্যশ্লোক ভাদুড়ী জানান, বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রস্রোতের ‘সার্কুলেশন প্যাটার্ন’ পাল্টাচ্ছে – ফলে তিমিরা মাঝসমুদ্রে যথেষ্ট পরিমাণে খাবার পাচ্ছে না বা ঠিক সময়ে সেটা পাচ্ছে না। এই কারণেই তারা খাবারের সন্ধানে সৈকতের কাছে অর্থাৎ অগভীর জলের দিকে চলে আসছে – এবং সেখানে খাবার পাক বা না-পাক, জলটা অগভীর হওয়ার কারণে অনেক সময়েই আটকা পড়ছে।
১৯৭৩ সালেও প্রায় দেড়শো তিমি এই তামিলনাডুর উপকূলে এসে মারা গিয়েছিল। ড. ভাদুড়ীর মতো বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে পুরো বঙ্গোপসাগরের তটরেখা জুড়ে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে।
তবে আসামের জাটিঙ্গা গ্রামে যেমন পাখিদের আলোয় ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করতে দেখা যায়, তিমিদের এই বিচিং-কে ঠিক আত্মহত্যা বলতে রাজি নন ড ভাদুড়ী। তবে এটাও ঠিক যে তুতিকোরিন সৈকতে অনেক তিমিকে সাগরে ঠেলে দেওয়ার পরেও তারা ফিরে এসেছিল।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি-প্রতিদিন/১২ জানুয়ারি, ২০১৫/মাহবুব