মাত্র সকাল হয়েছে। পুরুয ওয়ার্ডে কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। কেউ ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাচ্ছেন। কারও স্যালাইন চলছে। হঠাৎই সেখানে একটি হনুমানের প্রবেশ। মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরল রোগীদের মধ্যে। একজনতো বিছানা থেকে পড়েও গেলেন। কিন্তু এতে কোন ভ্রূক্ষেপই নেই হনুমানের। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে একটু পরেই খোলা দরজা দিয়ে সে হঠাৎ হাজির নার্সদের ঘরে।
এদিকে রাতভর ডিউটির শেষে সবেমাত্র দুই নার্স একটু চেয়ারে হেলান দিয়েছেন। আচমকা ঘরে বানরকে দেখে ভয়ে তাদেরও অবস্থা খারাপ। কী করা উচিত তা ভাবতে ভাবতেই কাটছে সময়। কিন্তু বার বার নিজের পা তুলছে কেন হনুমানটা! হঠাৎই তাদের একজনের নজরে পড়ল তার ডান পায়ের দিকে। চামড়া উঠে বেশ রক্ত ঝড়ছে পা থেকে। কিছুটা বুঝতে পেরে কোন মতে সাহস নিয়ে একজন নার্স এগিয়ে যান তার দিকে। ধীরে ধীরে হাত দিয়ে দেখেন ক্ষতস্থান।
ওই নার্স বলেন, 'টেবিলের উপর তখন একেবারে বাধ্য রোগীর মতো চুপ করে বসে রয়েছে হনুমানটি। আস্তে আস্তে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিই ওর পায়ে। ব্যান্ডেজ বাঁধার পরে গায়ে দু’বার হাত বুলোতেই ধীরে সুস্থে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে এ গাছ সে গাছ করতে করতে অদৃশ্য হয়ে গেল সে।'
শনিবার ভারতের চুঁচুড়া ইমামবাড়া (সদর) হাসপাতালে কী চিকিৎসা করাতেই এসেছিল হনুমানটি? এ নিয়ে রবিবার দিনভর আলোচনা চলেছে গোটা হাসপাতাল জুড়ে। খবর পৌঁছে যায় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর কানেও। ওই নার্সের কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, 'এখানে যে চিকিৎসা হয়, হনুমানটির মধ্যে বোধ হয় সেই বোধ কাজ করেছিল!'
পথেঘাটে আহত হনুমানের চিকিৎসা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা নালিকুলের একটি সংস্থার সম্পাদক বিশাল সাঁতরার। তিনি বলেন, 'একবার নালিকুলেই একটি হনুমান কোন ভাবে আহত হয়েছিল। ওষুধ লাগাতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলেই তেড়ে আসছিল। আবার কামারকুণ্ডুতে একটি হনুমান কার্যত আমার গায়ে হেলান দিয়ে শুশ্রূষা করার সুযোগ দিয়েছে।'
তিনি আরও জানান, এ ক্ষেত্রে ঠিক কী কারণে হনুমানটি হাসপাতালে ঢুকে পড়েছিল, বলা মুশকিল। হতে পারে আগে কোন হনুমানকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এবং তার পরে সুস্থ হতে দেখেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এসেছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
বিডি প্রতিদিন/০১ আগষ্ট ২০১৬/হিমেল-০৮