প্রায় দেড় বছর ছোট বোনের মৃত দেহের সঙ্গে কাটিয়েছেন বড় বোন। আমেরিকার বোস্টনের কাছেই ব্রুকলিন শহরে এই অত্যাশ্চর্য ঘটনাটি ঘটেছে। প্রায় দেড় বছর ধরে মৃত হোপ হুউটনের সঙ্গে একই বাড়িতে ছিলেন লিন্ডা ওয়াল্ডম্যান। তারা সম্পর্কে দুই বোন।
১৯২০ সালে তৈরি হওয়া এই দুই বোনের বাড়িটির মূল্য প্রায় ১২ লক্ষ ডলার। প্রতিবেশীরা এই বাড়িতে ঢুকতে ভয় পেতেন। তবে দুই বোনকে মাঝেমধ্যে দেখা যেত বাড়ির বাইরে। কিন্তু ২০১৫ সালের জুন মাস থেকেই আর দেখা যায় নি ছোট বোন হুউটনকে। বড় বোনকে জিজ্ঞাসা করলেও মিলত না সঠিক কোন উত্তর। ধীরে ধীরে সন্দেহ দাঁনা বাঁধে প্রতিবেশীদের মনে। বাড়ি থেকে বিকট গন্ধ আসতে শুরু করলে তারা পুলিশে খবর দেয়। দোতলা বাড়ির একতলার রান্নাঘর থেকে পুলিশ উদ্ধার করে ছোট বোনের পচাগলা মৃতদেহ।
প্রতিবেশী হ্যারিয়েট অ্যালেনের কথায়, "প্রায় দেড় বছর ধরে ছোট বোনকে দেখতেই পাওয়া যাচ্ছিল না। একবার শুনেছিলাম হোপ নাকি সে গুরুতর অসুস্থ। তারপর ওর বড় বোনের কাছেই শুনি সুস্থ হলেও বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে হোপ। তারপর থেকে যখনই হোপের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতাম, এড়িয়ে যেত লিন্ডা। প্রথম প্রথম আমরা ব্যপারটাকে অতটা গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু দীর্ঘদিন হোপের কোনও খবর না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি আমরা। আচমকা লিন্ডাও উধাও হয়ে যায়। তাকেও আর দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম দুই বোন বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু বাইরে কোনও তালা নেই। এরপর আমরা ওই বাড়িতেও গিয়েছিলাম। দরজায় কড়া নাড়লেও কেউ সাড়া দিল না। সন্দেহ হল আমাদের। খবর দিলাম পুলিশে। গত বছরের ১৩ জুলাই পুলিশ এসেও দরজায় নাড়ল কড়া। কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। হতাশ হয়ে ফিরে গেল পুলিশ। গতবছরের ডিসেম্বর থেকে ওই বাড়ি থেকে বিশ্রী একটা গন্ধ আসছিল। দীর্ঘদিন ওই বাড়ির কোনও সংস্কার হয়নি। তার উপর এই গন্ধ। আবারও খবর দিলাম পুলিশে। তারপর তো দেখি এই কাণ্ড।"
ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর লিন্ডা জানিয়েছেন, হোপ অসুস্থ থাকাকালীন বেশ কয়েকবার ডাক্তাররা এসেছিলেন আমাদের ক্লিন্টন রোডের বাড়িতে। মেডিকেল টিমের অনেকেই হোপকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু হোপ রাজি হয়নি। একদিন সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ল। আমার কাছে পানি খেতে চাইল। কিছুটা পানি খেয়েই আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ল। তারপর থেকেই ওকে আগলে রেখেছি। প্রায় এক বছর বাড়ির বাইরেও যাইনি।
উল্লেখ্য মা–বাবা মারা যাওয়ার পর দুই বোন একসঙ্গেই থাকতেন। দুই বোনের কেউ বিয়ে করেননি। ছোট বোন মারা যাওয়ার পরও বড় বোন তার সঙ্গে ছাড়েননি!
বিডি-প্রতিদিন/ ১৪ জানুয়ারি, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-১৩