চাকরির জন্য শখ ছাড়েন অনেকেই কিন্তু শখের জন্য চাকরি ছাড়তে দেখা যায় কজনকে? তাও আবার ভ্রমণ সঙ্গী নিজের পোষা বিড়ালকে নিয়ে?
রিচার্ড ইষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন৷ গোটা অস্ট্রেলিয়া ঘুরবেন স্লিপার ভ্যানে৷ তবে ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে কোন মানুষকে রাখছেন না তিনি৷ সঙ্গে থাকবে তার পোষা বিড়ালটি৷ উইলো তার খুব পছন্দের পোষ্য৷ দুজনের পারস্পরিক বোঝাপড়াও বেশ জোরালো৷
সোশ্যাল মিডিয়া এখন বিশ্বের মানুষকে একত্র করেছে এক জায়গায়৷ এই খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতেও যেমন দেরি হয়নি তেমনি লক্ষ লক্ষ লাইক কমেন্ট পরতেও দেরি হয়নি৷ শুধু তাই নয়, বহু মানুষ রিচার্ডকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন৷ রিচার্ড ও উইলোর বন্ডিং দেখে অনেকেই ভাবছেন এমন সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলবেন৷
রিচার্ড চান তিনি ও তার ৬ বছরের বিড়াল উইলো পুরো অস্ট্রেলিয়ার যত রাস্তা আছে একটাও বাদ না দিয়ে শুধু ঘুরেই বেড়াবেন৷ এরপরই বেড়িয়ে পড়েন দুজন৷ তিন বছর পরেও তাদের ভ্রমণ শেষ হয়নি৷ তারা দুই জন মিলে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যান৷ একসঙ্গে মনে গেঁথে রাখার মত সুন্দর জায়গায় মনের আনন্দে বেড়ান৷
এভাবেই একে অপরকে সময় দিয়ে চলেছেন দু'জনে৷ যেখানে কোন দেনা পাওনার হিসাব নেই৷ নেই কোনও বাধ্যবাধকতা৷ সেখানেই মজেছেন তামাম ইন্টারনেট ইউজার্স৷ চাওয়া পাওয়ার হিসাবের বাইরে থেকে এরকম বেহিসাবি ঘুরে বেড়াতে কে না চায়?
এই গল্পের শুরু হয় ২০১৪ সালে৷ সে বছরই বেড়ানোর জন্য আইটির চাকরিটা ছেড়ে দেন ইষ্ট৷ তিনি জানান, “আমি দশ বছর ওই সংস্থার সঙ্গে চাকরি করেছি৷ তারপরেও আমার প্রতিশ্রুতিময় লাগছিলনা আমার পেশাটি৷ আমি লোকসান করেছি বলে মনে হতে থাকে৷”
তিনি আরও বলেন, “তখন আমি ভাবি মাস ছয় ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসব৷ কিন্তু সেই একই সমস্যার মধ্যে ফিরতে আমায়৷ এই ভাবনাটা মাথায় আসতে থাকে৷ এরপরই ভাবি নাহ৷ ছ’মাসের বেশি সময় দরকার৷ ছ’মাসে হবেনা৷”
তিনি সিদ্ধান্ত নেন তার ভকসওয়াগন ভ্যানটি রিমডেল করবেন৷ সেটাকে বাড়ির মত তৈরি করে ফেলতে হবে৷ যাতে থাকবে বাড়ির মত সবরকম সুবিধা৷ তিনি জানান “তারপরেই ভ্যান লাইফের কথা মাথায় আসে৷ আমি নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিই৷ যা কিছু আমি কিনেছিলাম সব বিক্রি করে দিই৷ আমার মাথার মধ্যে ছিল আমি কিভাবে জীবন কাটাব৷ তাই তারপর আমি কম খরচে জীবন যাপন শুরু করে দিই৷”
ইষ্ট তার সব মায়ার জিনিস বিক্রি করে দেন৷ কিন্তু বিক্রি করতে পারেননি একটি জিনিস৷ তা হল তার পোষ্য বিড়াল উইলোকে৷ উইলোর থেকে আলাদা করে নিজেকে ভাবতে পারেননি ইষ্ট৷ তিনি বলেন, “সত্যি কথা বলতে কি উইলো আমার জীবনের প্লানের মধ্যে ছিল না৷ কিন্তু এটা ঘটে যায়৷ আমি বুঝতে পারি যে উইলোকে পেছনে ফেলে রেখে আমি যেতে পারবনা৷ সে সবসময় আমার পাশে ছিল৷ তাই আমি প্রমিস করি আমি কোনও দিনও তাকে ছেড়ে দেব না৷ এটাই আমার জীবনের সবথেকে বড় সিদ্ধান্ত৷”
কিন্তু বিষয়টা বলতে যতটা সহজ ঘটানোটা তত সহজ ছিলনা৷ একটা বিড়ালকে ‘ট্রাভেলিং ক্যাট’ তৈরি করা সহজ নয়৷ কারণ সে সারা জীবন ঘরের ভিতরে থেকেছে৷ “যখন আমি ভ্যানটা তৈরি করছিলাম সসময় উইলো অনেকটা সময় আমার সঙ্গে কাটিয়েছে৷ তখন সে বুঝতে পারে এটা তার জন্য নিরাপদ ঘর হবে৷ এবং সে শিখে ফেলে তার ভিতরে থাকা৷” জানান ইষ্ট৷
যদিও তিনি উইলোকে ভ্রমণের পাঠ খুব ধীরে ধীরে পড়িয়েছেন৷ “আমি প্রথমে উইলোকে নিয়ে উইকেন্ড ট্যুরে যেতে শুরু করি৷ তারপর পুরা সপ্তাহ৷ এরপর সে শুধু শিখেই ফেলে না বেড়ানোকে ভালবেসে ফেলে৷” এমনটাই নিজের ওয়েবসাইটে জানিয়েছেন ইষ্ট৷
উইলো ইতিমধ্যেই ট্রপিক অফ ক্যাপ্রিকর্ন পার করে ফেলেছে ছ’বার৷ উইলোর এই ভ্রমণে সবথেকে প্রিয় বিষয় হল বেড়ানোর সময় বিড়ালের ঘুমনোর সবথেকে ভালো জায়গা কোনটা সেটা খুঁজে বের করা৷ ইষ্ট জানিয়েছেন “উইলো সবসময় খুঁজতে থাকে সবচেয়ে ভাল জায়গা কোনটা আর সবথেকে নরম ঘাস কোন মাঠে আছে৷ তবে সে সবথেকে পছন্দ করে ধূলায় গোসল করা৷”
আর কিছু ভাবতে চান না ইষ্ট৷ এভাবেই কাটিয়ে দিতে চান সময়৷ তিনি ও তাঁর উইলো মিলে যা ইচ্ছে তাই করতে চান৷ সেটাই করে চলেছেন৷ সেটাই করে যাবেন৷ দুজনের এই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার নয়৷
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর