রোজা রেখে ভ্যান চালান গোবিন্দগঞ্জের জুয়েল প্রধান (৫০)। রোদে পুড়ে ঘামে ভিজে যাত্রী ও মালামাল পরিবহণ করেন তিনি। পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে ৪ জন যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে কামদিয়া অটোস্ট্যান্ডে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে মুখ মুছছিলেন। হঠাৎ বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা তার হাতে পৌঁছে দিলেন খিচুড়ি, মাংস ও খেজুরের প্যাকেট। সঙ্গে এক বোতল পানি। জুয়েল প্রধানের চোখে তখন আনন্দের অশ্রু। তিনি বললেন, 'ইফতারে মুড়ি আর অল্প বুট বন্দা দিয়্যা গত কয়দিন ধরিয়্যা ইফতার করিচ্ছি। আইজ তোমরা হামাক শান্তির ইফতারি দিলেন। আল্লাহ তায়ালা তোমার ঘোরে ভালো করব্যা।'
শুধু তিনি নন, রিকশা চালক আব্দুর রহমান (৪৫), মো. শফিকুল ইসলাম(৪০), মো. সাকা হোসেনসহ ৫০ জন রিকশা ও ভ্যানচালক বসুন্ধরা শুভসংঘের ইফতারের প্যাকেট পেয়ে খুশি।
সোমবার (১০ মার্চ) বিকেলে উপজেলার কাটা, কামদিয়া ও সর্দারহাট ঘুরে ঘুরে অসহায় এসব শ্রমজীবী মানুষের হাতে পৌঁছে দেন শুভসংঘ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শাখার বন্ধুরা। এর আগে শুভসংঘের ইফতার বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি সানোয়ার হোসেন দীপু।
এসময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাকিম আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিউর রহমান মিলন, শিবপুর ওয়ার্ড মেম্বার মো. খসরু মিয়া, জেলা শুভসংঘের সভাপতি হুমায়ুন আহমেদ বিপ্লব, উপজেলা সহসভাপতি মেহরাব জাহিদ, জেলা সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান আজীম প্রধান, উপজেলা সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অর্কিক সুলতানসহ অন্যরা।
কাটা এলাকার রিকশা চালক আব্দুর রহমান জানান, 'রমজানে আয় রোজগার এমনিতেই অনেক কম। বাড়িতে ৭ জন সদস্য। রিকশা টেনে যা আয় করি তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। রোজার দিনে এখন পর্যন্ত আপনাদের দেয়া ইফতারের মতো ভালো খাবার পাইনি। বসুন্ধরার সকলের জন্য দোয়া করি।'
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি সানোয়ার হোসেন দীপু বলেন, 'রোজা রেখে যারা টানা পরিশ্রম করে যান তারা সকলেই অসচ্ছল মানুষ। ইফতারের সময় তাদের বেশিরভাগ বাড়িতে যেতে পারেন না। পথেই কোনো রকমে ইফতার সেরে নেন। শুভসংঘ নানা ধরনের ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত। আজকের এই ইফতার বিতরণ তার একটি উদাহরণ। তবে এইসব মানুষ যাতে ইফতার ও সেহরীতে অন্তত মাঝে মধ্যে পুষ্টিমান সম্মত খাবার পান সেই দিকটি সমাজের বিত্তবানদের দেখা প্রয়োজন।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাকিম আহমেদ বলেন, 'শুভসংঘের বন্ধুরা প্রায় সকলেই তরুণ ও শিক্ষার্থী। তারা এর আগে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ, বাজার মনিটরিংসহ সব কাজে আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। অন্যান্য মানব কল্যাণমূলক কাজেও তারা অগ্রগামী। ইফতার বিতরণের মতো মহৎ একটি কাজে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভালো লাগছে।'
বসুন্ধরা শুভসংঘের জেলা সভাপতি হুমায়ুন আহমেদ বিপ্লব বলেন, দারিদ্র প্রবণ এলাকাগুলোতে শ্রমজীবী মানুষরা যাতে অন্তত একদিনও ভালো খাবার দিয়ে ইফতার করতে পারেন সেই পরিকল্পনা করেছে শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটি। তারই অংশ হিসেবে আজকের এই আয়োজন।
বিডি প্রতিদিন/মুসা