‘বাবা মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। হঠাৎ মারা যাওয়ার পর আলাদা থাকা ভাইয়ের সংসারের দ্বারস্থ হতে হয় মাকে নিয়ে। চলমান পড়ালেখা থমকে যায়। কিন্তু দমে যাননি মা।
হাতে সেলাই করা কাঁথা ও নিত্য সরঞ্জামাদি তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করেন, তাতেও আমার পড়ার খরচ মেটানো যাচ্ছিল না, যেন মেয়েই এখন বড় বোঝা। এমন একটা সময়ে বাড়ির পাশেই বসুন্ধরা শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কথা জানতে পারি। তাদের সব খুলে বলি। আমাকে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি সেলাই মেশিন হাতে পাই। মেশিনটি পেয়ে ঘরে ওঠানোর কয়েক দিনের মধ্যেই মায়ের বোঝার ভার নামতে থাকে।’ কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় একটি কলেজপড়ুয়া পূর্ণিমা রানী বর্মণ। দেড় বছর আগে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন পেয়েছেন তিনি।
পূর্ণিমা জানান, নিজেদের কোনো জমিজমা নেই। বাবা নদী, খাল-বিল থেকে মাছ মেরে তা বিক্রি করতেন স্থানীয় বাজারে। তা দিয়েই সংসার চলত। এর মধ্যে বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। মা-বাবা ও তিনি একসঙ্গেই ছিলেন।
দুরারোগ্য ব্যাধিতে বাবা মারা যাওয়ার পর চলমান পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। বড় ভাই বাজারে চেপা শুঁটকি বিক্রেতা। পড়ালেখার টাকা ভাইয়ের কাছে চাওয়া যায়নি। এর মধ্যে বিয়ের জন্য পাত্র দেখা শুরু হয়। পূর্ণিমা কোনোভাবেই বিয়ে করতে নারাজ। নিজের পায়ে দাঁড়ানো ছিল তাঁর স্বপ্ন। এর মধ্যে বসুন্ধরা শুভসংঘের সহায়তায় সেলাই মেশিন পেয়ে তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। প্রতিবেশীদের কাছে গিয়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা বলে অর্ডার নেন। পাশপাশি স্থানীয় বাজারের ছোট ছোট দোকানে গিয়ে নিজের তৈরি শিশুদের জামা, প্যান্টসহ অন্যান্য কাপড় দেন। স্বল্প খরচে এই কাপড় পেয়ে দোকানিরা তাঁর কাছ থেকেই জামাকাপড় তৈরি করাতে শুরু করেন। এখন তিনি প্রতি মাসে আয় করেন কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা, যা দিয়ে মায়ের ওষুধ-পথ্যাদি ছাড়াও নিজের পড়ালেখার খরচ মিটে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য একটি সঞ্চয়ও করছেন। পূর্ণিমা মনে করেন, তিনি এখন বোঝা নন, বসুন্ধরা শুভসংঘ সেই বোঝার ভার নামিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ