ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন আজ। বিবর্ণ শীতের পর বসন্তের আগমনে প্রকৃতি সাজে নতুন রূপে। চারদিকে সাজসাজ রব। গাছে গাছে জাগে নতুন পাতা, নতুন ফুলের সমারোহ। রঙের উচ্ছ্বাসে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে অশোক, পলাশ, শিমুল। বেরিয়ে আসে শীতের খোলসে ঢেকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম। ফুলে ফুলে ভ্রমরের খেলা, কোকিলের কণ্ঠে বেজে ওঠে অমৃত বাণী।
পহেলা ফাল্গুনের দিনটি বরাবরই অনন্য। দক্ষিণ দুয়ার খুলে দিয়ে প্রকৃতি যখন ফাগুনের হাওয়া বইয়ে দেয়, সেই হাওয়া প্রাণে ছুঁয়ে যায় সবাইকে। বসন্তকে স্বাগত জানাতে বসুন্ধরা শুভসংঘের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বন্ধুরাও সেজেছে বর্ণিল সাজে। শীতের শুষ্কতাকে মুছে বসন্তের প্রাণোচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন তারা। কবির ভাষায়—"ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক, আজ বসন্ত।"
বসন্তের গান, নাচ ও কবিতায় মুখর হয়ে ওঠে বসন্তের আনন্দযজ্ঞ। শুভসংঘের বন্ধুরা দিনভর বাসন্তী রঙে নিজেদের রাঙিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আহা, আজি এ বসন্তে’, ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান’ এবং কাজী নজরুল ইসলামের ‘মনের রঙ লেগেছে’ ও ‘বসন্ত মুখর আজি’ গানগুলো গেয়ে ওঠেন সবাই।
এছাড়াও শাহ আবদুল করিমের জনপ্রিয় গান ‘বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে’—এই গানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো আয়োজন।
নাচ ও কবিতার পরিবেশনায়ও ছিল বিশেষ আয়োজন। বন্ধুদের আবৃত্তিতে উঠে আসে নির্মলেন্দু গুণের ‘বসন্ত বন্দনা’, জীবনানন্দ দাশের ‘পাখিরা’, মহাদেব সাহার ‘বসন্তের একটি বাংলা উদ্ধৃতি’, মাহবুব আলমের ‘বসন্তের দান’ এবং সুব্রত পালের ‘থেকো, বসন্ত সন্ধ্যায়’—এর মতো কালজয়ী কবিতাগুলো।
বসুন্ধরা শুভসংঘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. আমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম উদ্দীন, দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মেহেদী, সদস্য নাছিফুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম, মমিনুল হক সৌরভ, শাকিল হাসান, আলী আজগর, রাহিমুল, আশরাফুল আলম, রওশন আলী, সাদিয়া, হাসি, উন মারমা, অনামিকা বর্মণসহ অনেকেই।
শুভসংঘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. আমিনুর রহমান বলেন, "যৌবনের রাজদণ্ড যে ঋতুর হাতে, সেই বসন্তের প্রথম দিন আজ। নবীন আনন্দে জেগে ওঠার উদ্বোধনের কাল। বসন্তের প্রথম দিনটি বাঙালির ভালোবাসার দিন হিসেবেও পরিচিত। বসন্তকে বরণ করে নিতে প্রতি বছর পহেলা ফাল্গুনে বাংলাদেশে বিশেষ উৎসবের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির ধারক-বাহক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাই বসন্তকে আলিঙ্গন করতে আমাদের এই প্রাণোচ্ছল আয়োজন।"
বিডি প্রতিদিন/আশিক