শায়ান আর তুয়াশা যাবে বৈশাখী মেলায়। আগে থেকেই বাবা বলে রেখেছিল শায়ানকে মেলায় নিয়ে যাবে। প্রতি নববর্ষে গ্রামে বৈশাখী মেলা শুরু হয়। এবারও শুরু হয়েছে। শায়ানদের বাড়িতে একটা ভূত থাকে। ভূতটা মাঝে মাঝে শায়ানকে ভয় দেখায়। কখনো কখনো তুয়াশাকেও ভয় দেখায়। তুয়াশা হচ্ছে শায়ানের বড় বোন। দুই ভাইবোনও জানে তাদের বাড়িতে একটা ভূত থাকে। কিন্তু কোনোভাবেই বাবা-মা তা বিশ্বাস করে না। তারা বলে ভূত বলে কিছু নেই। সব মনের ভয়।
সেই ভূতটাও মেলায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতকাল বাবা-ছেলের কথা শুনে ফেলেছিল ভূতটা। এরপর তারও ইচ্ছে হলো মেলায় যাওয়ার জন্য। সমস্যা একটা ছিল। সেটা হলো, দিন দুপুরে যেতে হবে। ভূতদের তো আবার দিন দুপুরে চলাফেরা করতে অসুবিধা। তবুও ভূতটা মেলায় যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। ভাবল সে যাবে ছায়া হয়ে। চরম রৌদুরে ছায়া হয়ে থাকলে কেউ বুঝতেই পারবে না। মেলায় নিশ্চয় প্রচুর ভিড় থাকবে। কার ছায়া কে দেখবে? ছায়া হয়েই ভূতটা চলল মেলায়।
শায়ান, তুয়াশা বাবার সঙ্গে মেলায় ঢুকেই বুঝল কী সুন্দর বৈশাখী মেলা। মেলায় গিয়ে ওরা উঠল নাগরদোলায়। ওদের সঙ্গে ভূতটাও উঠল নাগরদোলায়। তবে ঝুলে থাকল ছায়া হয়েই। ঝুলে থেকেও ভূতটা খুব মজা করল। ওরা সার্কাস খেলা দেখল। দেখল পুতুল নাচ। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে শায়ান ভাবল কিছু তো খাওয়া প্রয়োজন। বাবাকে বলল খাওয়ার কথা। বাবা ওদের নিয়ে গেল মিষ্টান্ন ভান্ডারে। সেখানে তারা বাতাসা খেল। শুধু খেল না, মজা করে খেল। বাতাসাগুলো বানানো হয়েছে নানান ডিজাইনে। যেমন- হাতি, ঘোড়া, মাছ আরও নানা ডিজাইনের বাতাসা। শায়ান খেল ১২টা হাতি, চারটা ঘোড়া আর দুটি মাছ। তুয়াশাও খেল অনেক।
এরপর ওরা আরও ঘুরল। ঘুরে ঘুরে অনেক খেলনা কিনল। মাটির পাতিল, বাঁশি, রঙিন বেলুন, পুতুল, টমটম গাড়ি আরও কত কী। মেলায় ঘুরতে ঘুরতে অনেক সময় পার করল ওরা।
দুঃখের বিষয় হলো ভূতটা কিছুই খেতে পারল না। কিছু নিতেও পারল না। কারণ সে নাগরদোলায় ঝুলে থেকে এতই মজা পেয়েছে যে সে শুধু ঘুরছে আর ঘুরছে। শায়ানরা যখন মেলা থেকে বের হয়ে যাবে ঠিক সেই সময় নাগরদোলা থেকে নামল ভূতটা। কারণ ফিরে যেতে হবে।
পিছু নিল শায়ানদের। যেতে যেতে ভূতটা শুনল ভাইবোনের কথা। শায়ানের কী কী ভালো লেগেছে তুয়াশার কী কী ভালো লেগেছে। তারা একে-অপরে বলাবলি করছিল। একসময় বোন তুয়াশা তো শায়ানকে বলেই ফেলল, ভাই তুই কীভাবে ১২টা হাতি, চারটা ঘোড়া খেয়ে ফেললি?
জবাবে শায়ান বলল, তুইও তো খেয়েছিস!
তাই বলে তো আমি এক ডজন হাতি খাইনি। এক হালি ঘোড়াও খাইনি।
এই শুনে ভূতটা চরম ভয় পেয়ে গেল। ভূতটা সার্কাসের প্যান্ডেলে কয়েকটা হাতিকে দেখেছে। তাহলে এরা ভাইবোনে মিলে কি সব হাতি খেয়ে ফেলল? ঘোড়াও খেল। ওদের পেটে এত খিদে। এই ভেবে ভূতটা খুব ভয় পেল। আর ওদের পেছন থেকে সটকে পড়ল। যদি আবার তাকেও খেয়ে ফেলে। তার চেয়ে পালিয়ে যাওয়াই ভালো। ভূতটা আর ওদের সঙ্গে ফেরার চিন্তা করল না।