একটা সবুজ শ্যামল শান্ত পরিবেশ বেষ্টিত গ্রাম।
জনমানুষের সংখ্যা অতি নগণ্য।
চারদিকে ফুল-ফসলে ভরা, গাছে গাছে পাখিরা গান গায়। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহ করে বেড়ায়।
সেখানকার এক বাড়িতে বিড়ালদের একটা পরিবার বাস করত।
বিড়ালদের পরিবারের অভিভাবকের নাম ছিল টুসু।
টুসুর দুটো ছানা আছে, তাদের নাম মিনা ও টিনা।
একদিন মিনা ও টিনা তার মাকে বলল : মা, আমাদের আর গ্রামে থাকতে ভালো লাগছে না।
আমরা কী শহরে গিয়ে থাকতে পারি না?
গ্রামের মানুষগুলো খুবই নোংরা, যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে।
চারদিকে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষিত করে।
চারদিকে মশা-মাছির ভীষণ উপদ্রব বেড়েই চলেছে।
তেমনই আমাদের শরীরের সব রক্ত মশারা আনন্দ করে খেয়ে নিচ্ছে।
আমাদের শরীরে আর শক্তি নেই, সাহস নেই।
মা বিড়ালটি বলল : ঠিক আছে, তোমরা যখন বলছো- আমরা নিশ্চয়ই শহরে যাব।
শহরের পরিবেশে তোমরা মানিয়ে চলতে পারবে তো?
ছানা দুটি ঘাড় নেড়ে বলল, হ্যাঁ, মা- পারব।
পরের দিন বিড়ালটি ও ছানা দুটি আনন্দ করতে করতে শহরের দিকে রওনা হলো।
অনেক কষ্টে তারা শহরের একটা কলোনিতে প্রবেশ করল।
একটা বড় ফ্লাটে তারা ভয়ে ভয়ে উঠে বসল।
মনে মনে ভীষণ ভয় করছে, কেউ যদি তেড়ে আসে।
ফ্ল্যাটের একটা রুম থেকে ছোট একটা মেয়ে বেরিয়ে এলো।
মেয়েটি, বিড়াল তিনটিকে দেখেই খুব খুশি হলো।
তাদের হাত নেড়ে নেড়ে বলল : আয় আয় পুষি! মেয়েটির নাম টুম্পা, তাড়াহুড়ো করে কিচেন রুম থেকে ভাত, মাছ, মাংস এনে ওদের খেতে দিল।
ওরা তিনজনই আনন্দে লেজ নেড়ে নেড়ে খেতে লাগল। এত সুস্বাদু খাদ্য হয়তো আগে কখনো খায়নি।
কী! মজাদার সব খাবার।
গ্রামের লোকেরা হয়তোবা চোখেও দেখেনি।
ওরা তিনজনই আজকে ওই ফ্ল্যাটের নতুন অতিথি।
টুম্পার বয়স নয় কি দশ হবে।
টুম্পার আতিথেয়তায় ওরা তিনজনই মুগ্ধ হলো।
টুম্পার মা, বাবা এলো অতিথিদের দেখতে।
তারাও বিস্মৃত হলো, তারা ভাবল, কোথা থেকে এরা এলো?
টুম্পার মা-বাবা ভাবছে, মেয়েটা এবার ওদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে পারবে।
মেয়েটার অনেকটা একাকিত্বের অবসান ঘটবে।
বিড়াল ও ছানা দুটি পেট ভরে ভালো ভালো খাবার খেয়ে কিছুটা ক্লান্ত অনুভব করল।
রাত হয়েছে, এখন একটু ঘুমাতে হবে।
ফ্ল্যাটের এক কোণে তারা তিনজনে বেশ আরাম করে ঘুমিয়ে পড়ল।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর, গুনগুন শব্দ করে চারদিক থেকে মশাদের মিছিল আসছে।
মিনা ও টিনা ভীষণ ভয় পেয়ে গেল।
তারা ভাবছে, আমাদের মেরে ফেলতে কারা যেন হনহন করে ছুটছে।
কয়েক শ’ মশা তাদের তিনজনের শরীরে হুল ফোটাতে শুরু করল।
এক একটা মশার কামড় যেন এক একটা চাবুকের আঘাত।
তারা এবার মনে মনে ভাবছে, গ্রামের মশাগুলো অনেকটা নম্র ও ভদ্র ছিল।
আর শহরের মশাগুলোকে মনে হয় এক একটা ডাইনোসর।
আহ্! আমরা কী ভুল করলাম?
মিনা ও টিনা বলল : মা এভাবে দুই রাত কাটালে আমাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না?
বরং আমরা খুব সকালে উঠেই বাড়ির দিকে রওনা হই।
আমাদের গ্রামের বাড়িতে খাবারের সমস্যা হলেও আমরা সেখানে সুখেই ছিলাম।
ওই দুর্ধর্ষ ডাকাতদের হাত থেকে কিছুটা নিরাপদেই ছিলাম।
রাত না পোহাতেই মিনা, টিনা ও তাদের মা গ্রামের দিকে রওনা হলো!
তারা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, আমরা আর কখনো লোভ করব না।
ভগ্ন কুঁড়েঘরে থেকেও সুখশান্তি পাওয়া যায়।